পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মথের Svå: ওপারের আকাশে মেঘপুঞ্জ, তবে কি আর দেশের মত ভাল লাগছিল, তা নয়। কলকাতার চেয়ে ভাল বটে। একটা ছোট মেয়ে পশুপতিবাব বলাতে, অনেকগুলো বই ফুল তুলে এনে দিলে। পশুপতিবাবরে বাসায় বারান্দাতে বসে চা খেয়ে অনেক গল্প করা গেল । রাত্রে ফিরবার সময় মিনদের বাড়িটা দেখলাম । বাড়িটা ভালই, তবে বারাসাতে অত্যন্ত ম্যালেরিয়া বলে ও'রা এখানে থাকতে পারেন না । আজ রাধাকান্তদের বাড়ি গেলাম তার বৌভাতের নেমস্তৰে । অনেকদিন যাই নি ওদের বাড়ি, ওরাও খুব ভালবাসে । বাইরের ঘরে খুব ভিড় থাকা সত্বেও রাধাকান্ত, খিচু, ভীম, বাঁটুল সবাই এসে গল্পগুজব ও আপ্যায়িত করলে ৷ ভীম ও বাঁটুলের সে কি আনন্দ আমি গিয়েচি বলে ! রাধাকান্ত খাবার সময়ে হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেল ওর বোন লক্ষীর কাছে । লক্ষসীকে বললে—এ কে আলাদা জায়গা করে খেতে দে । লক্ষীর ছোট বোনটা বেশ বড় হয়ে উঠেচে দেখলাম । আমি একবার পুজোর সময় জাহ্নবীর মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম, ওর আগের পক্ষের খড়ীমা তাকে পুতুল দিয়েছিলেন—সে সব কথা বললে । বাঁটুল একটা ঘরের কাছে নিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে বেী দেখালে—ঘরের মধ্যে মেয়েদের ভিড় । সোনারবেনের মেয়েরা অত্যন্ত গহনা, পরে এক একটি মেয়ের আপাদমস্তক গহনায় মোড়া, নাকের নথও বাদ যায় নি । আজকাল যে এত গহনা পরার রেওয়াজ আছে, বিশেষ এই কলকাতা শহরে—সে আমার ধারণা ছিল না । 鹽 觀 রাধাকাস্তের বোন লক্ষী অন্যরকম দেখতে হয়ে গিয়েচে । শিব যখন আর একবার দোতলার ঘরে বেী দেখাতে নিয়ে গেল তখন সে একখানা লুচি হাতে সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে লাগল, কিন্তু ও যেন বড় ছেলেমান ষ হয়ে গিয়েচে । - রাধাকান্ত ছেলেটি আমায় খুব ভালবাসে এ আমি বরাবরই দেখে আসচি–শিবর চেয়ে ভীমের চেয়েও । ওর মধ্যে কপটতা নেই । কলকাতায় বড় একটা আনন্দ পাওয়া যায় না ; কিন্তু কাল সন্ধ্যা ছ-টার সময় বাসায় ফিরে এসে বারাশদীতে বসে আছি, হঠাৎ মনে আপনা-আপনিই আনন্দ এল । সকলের কথা মনে এল । দেখলাম ভেবে নিরাকার ভগবানকে আমি বুঝি নে, তাঁর ধারণাও করতে পারি নে—God as pure spirit তাঁকে বুঝতে পারবো না যতক্ষণ তাঁর রপ না পাচ্ছি। যখন তিনি নিদিষ্ট রপে গ্রহণ করে আসবেন, তখন তাঁকে আমরা ভক্তি করতে পারি। কেন না মানুষ নিরাকার নয়। এমন সে কখনও জীবের কল্পনা করতে পারবে না যার প্রাণ আছে, মন আছে, অথচ আকার নেই। নিরাকার ভগবানের উপাসনা কি সোজা ব্যাপার । কিন্তু এসব কথা অবাস্তর ; আমার মনে উঠল একটা অন্য ভাব । খকুদের কাছে একটা বার-তের বছরের ছোট মেয়ে খেলে বেড়াচ্চে। মেয়েটি ভারী সন্দরী, নীলাবরী শাড়ি পরনে, বিদ্যুতের মত ছটে ছটে খেলে বেড়াচ্চে । মাথার খোঁপাটিতে যেমন ঘন কালো চুল, তেমনি পরিপাটী করে বাঁধা । ওকে দেখলেই মনে হোল Out of clay ভগবান এমন সম্বর ছাঁচে গড়েচেন, এমন আকারে গড়েচেন—আর তিনি নিজে নিরাকার, এ কেমন করে ভাবতে ভাল লাগে ? কি অদ্ভুত রসায়ন যার বলে মাটি থেকে অমন সুন্দরী মেয়েটির মত চেহারা তৈরি হয়েচে । তিনি নিজেও ইচ্ছা করলে সন্দের মাত্তিতে প্রকাশ হতে পারেন নিজে, যে দেশের লোকে যা ভালবাসে সেই মাত্তিতে। যেমন ধরা যাক, আমাদের দেশে বহন শতাব্দী ধরে গলে বনমালা, মাথায় শিথিপচ্ছে, হাতে বেণ এই শ্রীকৃষ্ণের কিশোর মাত্তি'র প্রচলন, তাও দ্বারকা বা কুরক্ষেত্রের শ্ৰীকৃষ্ণকে কেউ চায় না—সে সময় তিনি নিশ্চয় প্রৌঢ় হয়েছিলেন যদি বি. র. (৩য়)—৩০