পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&O বিভূতি-রচনাবলী ভাল বর জোটাতে পারলে না কেন জানি নে, কারণ তার বাবা গরীব নয়, ইচ্ছে করলে দপয়সা খরচ তো করতে পারতো । ● এইবার ঘন মেঘ করে ব্যটি এল। গাড়ি এখন শালবনি ছাড়িয়ে গিডনি স্টেশনে এসে পৌঁছেচে । বড় ইচ্ছে ছিল বাকুডি যাবো, কিন্তু যাওয়া হোল না। ● সবণরেখার ধারে এসে ঘন ছায়াভরা বৈকালে শালবনের মধ্যে এক জায়গায় বসলাম । ওই দরে সিদ্ধেশ্বর ডুংরী, যার মাথায় উঠে বনে চিড়ে দই খেয়েছিলাম, যার মাথায় উঠে শিলাখণ্ডে নাম লিখে রেখেছিলাম । চারিধারে শ্যামল বনানী, প্রাস্তর ধানবন, শালগাছ। ওই ওপারে প্রকাণ্ড দীঘ পাহাড়শ্রেণী । সামনে খরস্রোতা সবণরেখা, তীরে ছোট বড় শিলাখণড, শাল চারার জঙ্গল । সন্ধ্যা নেমে আসচে, পাহাড়শ্রেণী নীরব, বনানী নীরব, মেঘলা, সবণরেখার কুলকুল শব্দ ছাড়া অন্য কোনই শব্দ নেই । গত শনিবারে এমন সময় ইছামতীর ধারে বসে আছি । এই নিস্তবধ অপরাহ্লে সবণরেখার তীরে দাঁড়িয়ে পেছনের শালবনের মাথার ওধার দিয়ে পৰবদিকে চেয়ে দেখলাম, দুরে এমনি ইছামতী নদী বয়ে যাচ্চে, বাংলাদেশের এক অখ্যাত পাড়াগায়ের কোল দিয়ে । , সেই নদীর ধারে একটা গাঁয়ের ঘাটে এক জায়গায় একটা বনসিমের ঘন ঝোপ নত হয়ে আছে ঘাটের পথের ওপরে। একটি মেয়ের ছবি সেই বনসিমের লতার ঝোপের তলায় চিরকাল অক্ষয় হয়ে আছে। ছবিটি মনে পড়তেই অপৰ্ব আনন্দে ও মাধযেf্য এই সন্ধ্যা ভরে উঠলো, বাতাস আরও মধর হোল । আমার ঘরে গত জ্যৈষ্ঠমাসে একদল রামছাগল উঠে উপদ্রব করছিল, আমি হাট থেকে এসে 'দর দরে করে ছাগলের দল তাড়িয়ে দিলাম, সেই কথা মনে পড়লো। এই রামছাগলের দল তাড়ানোর সঙ্গে আমার সেদিনের একটা বড় মধর ঘটনা মেশানো আছে, কেউ তা জানে না-তা আমি এখানে লিখবও না । এটুকু লিখে রাখলাম এজন্যে যে সবণরেখার তীরে দাঁড়িয়ে এই বষসিন্ধ্যায় সেই ঘটনাটা আমার মনে এসেছিল । সপ্রভা কত দুরে আছে, তার কথাও মনে হোল এ সন্ধ্যায়। বড় ভাল মেয়ে সে, তার মতো মেয়ে কখনো দেখি নি । এই ডায়েরীটি শেষ হয়ে গেল। আমার জীবনে এই দেড় বছর বড়ই আনন্দের। পরিপণ" আনন্দের। নানা ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত—কত নতুন বন্ধ লাভ, কত অভিজ্ঞতা। কত পরোনো বন্ধদের সঙ্গে আলাপ হোল বহুদিন পরে এই দেড় বছরের মধ্যে, এই ১৯৩৬ সালে । যেমন মণিকুন্তলা তার মধ্যে একজন। ভগবানকে এজন্যে ধন্যবাদ জানাই । কত কি পেলাম এই দেড় বছরে। সব কথা ডায়েরীতে লেখা যায় না। যা এখানে লিখলাম না, তা রইল আমার মনের গভীর গোপন তলে । কম’হীন অবকাশ-মহমত্তে" তাদের চিন্তা আমায় আনন্দ দেবে। কত জায়গায় বসেই কত ডায়েরী লিখলাম, ভাগলপুরে, ইশমাইলপরে দ্বিয়ারায়, আজমাবাদ কাছারীতে, কাশীতে, রাধামাইনসে, নাগপারে, কলকাতায় ॥৫ o