পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8* বিভূতি-রচনাবলী পাইয়া দরমাহাটার এক গলিতে তাঁহার কাছে সকালের দিকে গেল । লোকের খবে ভিড়, কেহ দশনপ্রাথী, কেহ ঔষধ লইতে আসিয়াছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিবার পর অপর ডাফ পড়িল ৷ সন্যাসী গেরয়াধারী নহেন, সাদা ধতি পরণে, গায়ে হাত-কাটা বেনিয়ান, জলচৌকির উপর আসন পাতিয়া বসিয়া আছেন। অপর প্রশ্ন শনিয়া গভীরভাৱে বলিলেন —আপনার স্ত্রী কতদিন মারা গেছেন ? মাস দই ?—তার পনর্জন্ম হয়ে গিয়েছে । —অপর অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—কি ক’রে আপনি—মানে— সন্ন্যাসীজী বলিলেন—মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই হয়। এতদিন থাকে না—আপনাকে বলে দিচ্ছি, বিশ্বাস করতে হয় এসব কথা । ইংরেজি পড়ে আপনারা তো এ সব মানেন না । তাই হতে হবে । অপর একথা আদেী বিশ্বাস হইল না । অপণ", তাহার অপণা, আর মাস আট-নয় পরে অন্য দেশে কোন গহসেহর ঘরে সব ভুলিয়া ছোট খাকী হইয়া জমিবে ? এত স্নেহ, এত প্রেম, এত মমতা—এসব ভুয়োবাজি ? অসম্ভব “সারারাত কিন্তু এই চিন্তায় সে ছটফট করিতে লাগিল—একবার ভাবে, হয়ত সন্ন্যাসী ঠিকই বলিয়াছেন–কিন্তু তার মন বলে, ও-কথাই নয়—মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা স্বয়ং পিতামহ ব্ৰহ্মা আসিয়া বলিলেও সে-কথা বিশ্বাস করিবে না। দুঃখের মধ্যে হাসিও পাইল ।—ভাবিল অপণার পনৎজন্ম হয়ে গেছে, ওর কাছে টেলিগ্রাম এসেছে ! হামবাগ কোথাকার—দ্যাখ না কান্ড !-- এত ভয়ানক সঙ্গীহীনতার ভাব গত দশ-এগারো মাস তাহার হয় নাই । পিটুরা চলিয়া যাওয়ার পর বাসাও আর ভাল লাগে না, অপণার সঙ্গে বাসাটা এতখানি জড়ানো যে, আর সেখানে থাকা অসম্ভব হইয়া উঠিল। তদুপরি বিপদ, গাঙ্গলী-গিন্নী তাঁহার কোন বোনঝির সঙ্গে তাহার বিবাহের যোগাযোগের জন্য, একেবারে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন। তাহাকে একা একটু বসিতে দেখিলে সংসারের অসারত্ব, কথিত বোনঝিটির রপগণ, সম্মুখের মাঘ মাসে মেয়েটিকে একেবারে দেখিয়া আসিবার প্রস্তাব, নানা বাজে কথা । নিজে রাধিয়া খাওয়ার ব্যবস্হা—অবশ্য ইতিপবে সে বরাবরই রধিয়া খাইয়া আসিয়াছে বটে, কিন্ত এবার যেন রধিতে গিয়া কাহার উপর একটা সতীর অভিমান । ঘরটাও বড় নিউজ’ন, রাত্রিতে প্রাণ যেন হাঁপাইয়া উঠে। পাষাণভারের মত দারণ নিজ'নতা সব সময় বকের উপর চাপিয়া বসিয়া থাকে। এমন কি, শ্ধ ঘর নয়, পথে-ঘাটে অফিসেও তাই—মনে হয় জগতে কেহ কোথাও আপনার নাই । so তাহার বন্ধবোধবদের মধ্যে কে কোথায় চলিয়া গিয়াছে ঠিকানা নাই—প্রণবও নাই এখানে । মুখের আলাপী দু’চারজন বন্ধ আছে বটে কিস্ত-ও-সব বে-দরদী লোকের সঙ্গ ভাল লাগে না । রবিবার ও ছয়টির দিনগুলি তো আর কাটেই না—অপর মনে পড়ে বৎসরখানেক পষেবাও শনিবারের প্রত্যাশায় সে-সব আগ্রহভরা দিন-গণনা—আর আজকাল ? শনিবার যত নিকটে আসে তত ভয় বাড়ে । বৌবাজারের এক গলির মধ্যে তাহার এক কলেজ-বন্ধর পেটেণ্ট ঔষধের দোকান। অপণার কথা ভুলিয়া থাকিবার জন্য সে মাঝে মাঝে সেখানে গিয়া বসে। এ রবিবার দিনটাও বেড়াইতে বেড়াইতে গেল। কারবারের অবস্থা খুব ভাল নয়। বন্ধটি তাহাকে দেখিয়া বলিল—ও, তুমি ?—আমার আজকাল হয়েছে ভাই—“কে আসিল বলে চমকিয়ে চাই, কাননে ডাকিলে পাখি’—সকাল থেকে হরদম পাওনাদার আসছে আর যাচ্ছে—আমি বলি বঝি কোন পাওনাদার এল, ব’স ব’স । অপর বসিয়া বলিল—কাবলীর টাকাটা শোধ দিয়েছ ? —কোথা থেকে দেব দাদা ? সে এলেই পালাই, নয় তো মিথ্যে কথা বলি । খবরের