পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&8 বিভূতি-রচনাবলী কত রাত পৰ্য্যন্ত অপ চোখের পাতা বজাইতে পারিল না। লীলা যাহা লিখিয়াছে তাহার অপেক্ষা বেশী যেন লেখে নাই। সারা পত্ৰখানিতে একটা শাস্ত সহানুভুতি স্নেহপ্রীতি, কর্ণা। এক মহত্তে আজ দ্য বৎসরব্যাপী এই নিজ'নতা অপর যেন কটিয়া গেল —এইমাত্র সে ভাবিতেছিল সংসারে সে একা - তাহার কেহ কোথাও নেই । লীলার পত্রে জগতের চেহারা য়েন এক মহত্তে বদলাইয়া গেল। কোথায় সে—কোথায় লীলা । -- বহৃদরের ব্যবধান ভেদ করিয়া তাহার প্রাণের উষ্ণ প্রেমময় স্পশা অপর প্রাণে লাগিয়াছে— কিন্তু কি অপর্বে রসায়ন এ সপশটা—কোথায় গেল অপর চাকুরি যাইবার দুঃখ - কোথায় গেল গোটা-দুই বৎসরের পাষাণভারের মত নিজ’নতা নারীহৃদয়েয় আপনাব রসায়নের প্রলেপ তাহার সকল মনে, সকল অঙ্গে, কী যে আনন্দ ছড়াইয়া দিল । লীলা যে আছে, সব সময় তাহার জন্য ভাবে-দুঃখ করে, জীবনে অপর আর কি চায় ? সাক্ষাতের আবশ্যক নাই, জন্মজন্মান্তর ব্যাপিয়া এই সপশটুিকু অক্ষয় হইয়া বিরাজ করকে।--- লীলার পত্র পাইবার দিন-বারো পরে তাহর যাইবার দিন আসিয়া গেল । ছেলেরা সভা করিয়া তাহাকে বিদায়-সম্বন্ধনা দিবার উদ্দেশ্যে চাঁদা উঠাইতেছিল - হেডমাস্টার খুব বাধা দিলেন । যাহাতে সভা না হইতে পায় সেইজন্য দলের চাইদিগকে ডাকিয়া টেস্ট পরীক্ষার সময় বিপদে ফেলিবেন বলিয়া শাসাইলেন –পরিশেষে কুল-ঘরে সভার স্থানওঁ দিতে চাহিলেন না, বলিলেন – তোমরা ফেয়ারওয়েল দিতে যাচ্ছ, ভাল কথা, কিন্তু এসব বিষয়ে আয়রন ডিসিপ্লিন চাই - যার চরিত্র নেই, তার কিছুই নেই, তার প্রতি কোনও সম্মান তোমরা দেখাও, এ আমি চাই নে, অন্তত কুল-ঘরে আমি তার জায়গাদিতে পারি নে। সেদিন আবার বড় বটি । মহেন্দু সবই-এর আটচালায় জনবিশেক উপরের ক্লাসের ছেলে হেডমাস্টারের ভয়ে লুকাইয়া হাতে লেখা অভিনন্দনপত্র পড়িয়া ও গাঁদাফুলের মালা গলায় দিয়া অপরকে বিদায়-সম্মবন্ধনা জানাইল, সভা ভঙ্গের পর জলযোগ করাইল । প্রত্যেকে পায়ের ধলা লইয়া, তাহার বাড়ি আসিয়া বিছানাপত্র গুছাইয়া দিয়া, নিজেরা তাহাকে বৈকালে ট্রেনে তুলিয়া দিল । অপর প্রথমে আসিল কলিকাতায় । . একটা খুব লম্বা পাড়ি দিবে—যেখানে সেখানে -যেদিকে দই চোখ ধায়—এতদিনে সত্যই মুক্তি। আর কোনও জালে নিজেকে জড়াইবে না –সব দিক হইতে সতক থাকিবে –শিকলের বাঁধন অনেক সময় অলক্ষিতে জড়ায় কিনা পায়ে ! ইপিরিয়াল লাইব্রেরীতে গিয়া সারা ভারতবষের ম্যাপ ও য়্যাটলাস কয়দিন ধরিয়া দেখিয়া কাটাইল—ড্যানিয়েলের ওরিয়েন্টাল সিনারি ও পিৎকাঁটনের ভ্রমণ-বাত্তাস্তের নানাস্থান নোট করিয়া লইল—বেঙ্গল নাগপরে ও ইস্ট ইণ্ডিয়ান রেলের নানাস্থানের ভাড়া ও অন্যান্য তথ্য জিজ্ঞাসা করিয়া বেড়াইল । সত্তর টাকা আছে, ভাবনা কিসের ? কিস্ত যাওয়ার আগে একবার ছেলেকে চোখের দেখা দেখিয়া যাওয়া দরকার না ? সেই দিনই বৈকালের ট্রৈনে সে শ্বশুরবাড়ি রওনা হইলগ অপণার মা জামাইকে এতটুকু তিরস্কার করিলেন না, এতদিন ছেলেকে না দেখিতে আসার দরণে একটি কথাও বলিলেন না। বরং এত আদর-যত্ন করিলেন যে অপর নিজেকে অপরাধী ভাবিয়া সঙ্কুচিত হইয়া রহিল। অপর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা কহিতেছে, এমন সময়ে তাহার খড়শাশড়ী একটি সন্দের খোকাকে কোলে করিয়া সেখানে আসিলেন । অপর ভাবিল—বেশ খোকাটি তো । কাদের 2 খড়শাশুড়ী বলিলেন—যাও তো খোকন, এবার তোমার আপনার লোকের কাছে । থান্য যাহোক, এমন নিষ্ঠুর বাপ কখনও দেখি নি। বাও তো একবার কোলে—