পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত &q —বাঁধন-ছোঁড়া মুক্তির উল্লাস | বহুকাল পর স্বাধীনতার আঙ্গবাদন আজ পাওয়া গেল। ঐ আকাশের ক্রমবিলীয়মান নক্ষত্রটার মতই আজ সে দরে পথের পথিক-অজানার উদ্দেশ্যে সে যাত্রার আরম্ভ হয়ত আজই হয়, কি কালই হয় ! পলকিত মনে বিছানা হইতে উঠিয়া নাপিত ডাকাইয়া কামাইল, ফস কাপড় পড়িল । পরাতন শৌখিনতা আবার মাথা চাড়া দিয়া উঠার দরুন দরজির দোকানে একটা মটকার পাঞ্জাবি তৈয়ারি করিতে দিয়াছিল, সেটা নিজে গিয়া লইয়া আসিল ।• ভাবিল—একবার ইপিরিয়াল লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখে আসি নতুন বই কি এসেছে, আবার কতদিনে কলিকাতায় ফিরি, কে জানে ? বৈকালে মিউজিয়মে রকফেলার ট্রাস্টের পক্ষ হইতে মশক ও ম্যালেরিয়া সম্বন্ধে বক্ততা ছিল । অপরও গেল। বক্ততাটি সচিত্র । একটি ছবি দেখিয়া সে চমকিয়া উঠিল । মশকের জীবনেতিহাসের প্রথম পযর্ণয়ে সেটা থাকে কীট—তারপর হঠাৎ কীটের খোলস ছাড়িয়া সেটা পাখা গজাইয়া উড়িয়া যায় । ঠিক যে সময়ে কাঁটদেহটা অসাড়, প্রাণহীন অবস্থায় জলের তলায় ডুবিয়া যাইতেছে —নব-কলেবরধারী মশকটা পাখা ছাড়িয়া জল হইতে শৰ্মন্যে উড়িয়া গেল । 疆 মানষেরও তো এমন হইতে পারে । জলের তলায় সন্তরণকারী অন্যান্য মশক কীটের চোখে তাদের সঙ্গী তো মরিয়াই গেল –তাদের চোখের সামনে দেহটা তলাইয়া যাইতেছে। কিন্তু জলের উন্ধে যে জগতে মশক নবজন্ম লাভ করিল, এরা তো তার কোনও খবরই রাখে না, সে জগতে প্রবেশের অধিকার তখনও তারা তো অর্জন করে নাই—মৃত্যু দ্বারা, অন্ততঃ তাদের চোখে যা মাতু তার দ্বারা । এই মশক নিম্নস্তরের জীব, তার পক্ষে যা বৈজ্ঞানিক সত্য, মানুষের পক্ষে তা কি মিথ্যা ? কথাটা সে ভাবিতে ভাবিতে ফিরিল । যাইবার আগে একবার পরিচিত বন্ধদের সহিত দেখা করিতে বাহির হইয়া পরদিন সকালে সে সেই কবিরাজ বন্ধটির দোকানে গেল। দোকানে তাহার দেখা পাওয়া গেল না, উড়িয়া ছোকরা-চাকরকে :িয়া খবর পাঠাইয়া পরে সে বাসার মধ্যে ঢুকিল । সেই খোলার-বাড়ি—সেই বাড়িটাই আছে । সংকীর্ণ উঠানের একপাশে দখোনা বেলেপাথরের শিল পাতা । বন্ধটি নোড়া দিয়া কি পিষিতেছে, পাশে বড় একখানা খবরের কাগজের উপর একরাশ ধসের রংয়ের গড়া। সারা উঠান জড়িয়া কুলায়-ডালায় নানা শিকড়-বাকড় রৌদ্রে শকাইতে দেওয়া হইয়াছে । বন্ধ হাসিয়া বলিল, এসো এসো, তারপর এতদিন কোথায় ছিলে ? কিছ মনে করো না ভাই, খারাপ হাত, মাজন তৈরি করছি -এই দ্যাখ না ছাপানো লেবেল - চন্দমুখী মাজন, মহিলা হোম ইণ্ডাস্ট্রিয়ালু সিডিকেট –আজকাল মেয়েদের নাম না দিলে পাবলিকের সিমপ্যাথি পাওয়া যায় না, তাই ঐ নাম দিয়েছি। ব'স ব’স – ওগো, বার হয়ে এসো না । অপৰব এসেছে, একটু চা-টা করো। o .م অপ হাসিয়া বলিল, সিডিকেটের সভ্য তো দেখছি আপাতত মোটে দুজন, তুমি আর তোমার স্ত্রী এবং খুব যে য়্যাকটিভ সভ্য তাও বঝেছি । হাসিমুখে বন্ধ-পত্নী ঘর হইতে বাহিরে আসিলেন, তাঁহার অবস্থা দেখিয়া অপর মনে হইল, অন্য শিলখানাতে তিনিও কিছু পাবে মাজন-পেষা-কায্যে নিযুক্ত ছিলেন। তাহার আসিবার সংবাদ পাইয়াই শিল ছাড়িয়া ঘরের মধ্যে পলাইয়াছিলেন । হাত-মাখের গড়া ধইয়া ফেলিয়া সভ্য-ভব্য হইয়া বাহির হইলেও মাথার এলোমেলো উড়ন্ত চুলে কপালের পাশের ঘামে সে কথা জানাইয়া দেয় । বন্ধ বলিল—কি করি বল ভাই, দিনকাল যা পড়েছে, পাওনাদারের কাছে দুবেলা