পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ԳՏ কুয়াসায় ঘেরা মরভূমির মধ্যে অতীতকালের বিস্মত দেবদেবীর মন্দির, এপিস, আইসিস, হোরাস, হাথর, রা-নীল নদ যেমন গতির মুখে উপলখণ্ড পাশে ঠেলিয়া রাখিয়া পলাইয়া চলে—মহাকালের বিরাট রথচক্ৰ তাণ্ডব-নত্যছন্দে সব স্থাবর অস্থাবর জিনিসকে পিছ, যেগঁলয়া মহাবেগে চলিবার সময় এই বিরাট গ্রানাইট মন্দিরকে পথের পাশে ফেলিয়া রাখিয়া চলিয়া গিয়াছে, জনহীন মরভূমির মধ্যে বিগমত সভ্যতার চিহ্ন-মন্দিরটা, কোন বিস্মত ও বাতিল দেবদেবীর উদ্দেশ্যে গঠিত ও উৎসগীকৃত। & একটু রাত্রে ভদ্রলোকটি বলিলেন, এ লাইনে ভাল খাবার পাবেন না, আমার সঙ্গে খাবার আছে, আসন খাওয়া যাক । তাঁহার সতী কলার পাতা চিরিয়া সকলকে বেঞ্চির উপর পাতিয়া দিলেন- লুচি, হালয়া ও সন্দেশ—সকলকে পরিবেশন করিলেন । ভদ্রলোকটি বলিলেন, আপনি খানকতক বেশী লচি নিন, আমরা তো আজ মোগলসরাইয়ে ৱেকজানি করব, আপনি তো সোজা দিল্লী চলেছেন । এ-ও অপর এক অভিজ্ঞতা। পথে বাহির হইলে এত শীঘ্রও এমন ঘনিষ্ঠত হয় ! এক গলির মধ্যে শহরে শত বষ বাস করিলেও তো তাহা হয় না ? ভদ্রলোকটি নিজের পরিচয় দিলেন নাগপরের কাছে কোন গবনমেণ্ট রিজাভ* ফরেস্ট-এ কাজ করেন, ছটি লইয়া কালীঘাটে বশুরবাড়ি আসিয়াছিলেন, ছয়টি অস্তে কম স্থানে চলিয়াছেন । অপরকে ঠিকানা দিলেন। বার বার অনুরোধ করিলেন, সে যেন দিল্লী হইতে ফিরিবার পথে একবার অতি অবশ্য অবশ্য যায়, বাঙালীর মুখ মোটে দেখিতে পান না –আপ গেলে তাঁহারা তো কথা কহিয়া বাঁচেন । মোগলসরাই-এ গাড়ি দাঁড়াইল । অপ মালপত্র নামাইতে সাহায্য করিল। হাসিয়া বলিল –আচ্ছা বৌঠাকরণ, নমস্কার, শুীগগিরই আপনাদের ওখানে উপদ্রব করছি কিন্তু । দিল্লীতে ট্রেন পে7ছাইল রাত্রি সাড়ে এগারোটায় । গাজিয়াবাদ স্টেশন হইতেই সে বাহিরের দিকে ঝু"কিয়া চাহিয়া দেখিল—যে-দিল্লীতে গাড়ি আসিতেছিল তাহা এস. কপার কোম্পানীর দিল্লী নয়, লেজিসলেটিভ য়্যাসেমব্লিীর মেম্বারদের দিল্লী নয়, এসিয়াটিক পেট্রেলিয়মের এজেণ্টের দিল্লী নয় — সে দিল্লী সম্পণে ভিন্ন —বহুকালের বহুলগের নরনারীদের —মহাভারত হইতে শরে করিয়া রাজসিংহ ও মাধবীকঙ্কণ,—সমৃদয় কবিতা, উপন্যাস, গল্প, নাটক, কল্পনা ও ইতিহাসের মাল-মশলায় তাহার প্রতি ইটখানা তৈরি, তার প্রতিধ্লিকণা অপর মনের রোমান্সেসকল নায়ক-নায়িকার পণ্যপাদপত—ভীম হইতে আওরঙ্গজেব ও সদাশিব রাও পযf্যস্ত গা-ধারী হইতে জাহানারা পয’্যন্ত --সাধারণ দিল্লী হইতে সে দিল্লীর দুরত্ব অনেক !—দিল্লী হনেীজ দরে অস্ত, বহৃদর বহশতাব্দীর দরে পারে, সে দিল্লী কখনও কেহ দেখে নাই । আজ নয়, মনে হয় শৈশবে মায়ের মুখে মহাভারত শোনার দিন হইতে ছিরের পুকুরের ধারের বাঁশবনের ছায়ায় কাঁচা শেওড়ার ডাল পাতিয়া রাজপত জীবন-সন্ধ্যা’ ও ‘মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত’ পড়িবার দিনগুলি হইতে, সকল ইতিহাস, যাত্রা, থিয়েটার, কত গল্প, কত কবিতা, এই দিল্লী, আগ্রা, সমগ্র রাজপুতানা ও আযাবত্ত"—তাহারমনে একটি অতি অপরপ, অভিনব, স্বপ্নময় আসন অধিকার করিয়া আছে—অন্য কাহারও মনে সে রকম আছে কিনা, সেটা প্রশ্ন নয়, তাহার মনে আছে এইটাই বড় কথা । কিন্তু বাহিরে ঘন অন্ধকার, কিছু দেখা যায় না—অনেকক্ষণ চাহিয়া কেবল কতকগলা সিগন্যালের বাতি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না, একটা প্রকাণ্ড ইয়াড’ কেবিন, লেখা