পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ԳՏ মাথার উপরকার আকাশে সরিয়া আসে, বিশালকায় ছায়াপথটা তেরছা হইয়া ঘুরিয়া যায়, বহিপ্পপতি পশ্চিম আকাশে ঢলিমা পড়ে। রাত্রির পর রাত্রি এই গতির অপবর্ণ লীলা দেখিতে দেখিতে এই শাস্ত সনাতন জগৎটা যে কি ভয়ানক রুদ্র গতিবেগ প্রচ্ছন্ন রাখিয়াছে তাহার স্নিগ্ধতা ও সনাতনত্বের আড়ালে, সে সম্বন্ধে অপর মন সচেতন হইয়া উঠিল-- অদ্ভুতভাবে সচেতন হইয়া উঠিল জীবনে কখনও তাহার এত ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয় নাই বিশাল নক্ষত্র-জগৎটার সঙ্গে, এভাবে হইবার আশাও কখনও কি ছিল ? অপর বাংলো-ঘরের পিছনে ও দক্ষিণে পাহাড়, পিছনকার পাহাড়তলী আধমাইলের কম, দক্ষিণের পাহাড় মাইল দুই দরে । সামনের বহদের বিস্তৃত উঁচুনীচু জমিটা শাল ও পপরেল চারা ও এক প্রকার অধীশকে তৃণে ভরা অনেক দর পয্যন্ত খোলা । সারা পশ্চিম দিকচক্ৰবাল জড়িয়া বহন্দরে বিধ্য পৰ্বতের নীল অস্পষ্ট সীমারেখা, ছিন্দওয়ারা ও মহাদেও শৈলশ্রেণী—পশ্চিমা বাতাসের ধলা-বালি যেদিন আকাশকে আবতে না করে সেদিন বড় সন্দের দেখায় । মাইল এগারো দরে নাম'দা বিজন বনপ্রান্তরের মধ্যে দিয়া বহিয়া চলিয়াছে, খাব সকালে ঘোড়ায় উঠিয়া স্নান করিতে গেলে বেলা নয়টার মধ্যে ফিরিয়া আসা যায় । দক্ষিণে পৰ্বতসানর ঘন বন নিবিড়, জনমানবহীন, রক্ষ, ও গভীর । দিনের শেষে পশ্চিম গগন হইতে অস্ত-সয্যের আলো পড়িয়া পিছনের পাহাড়ের যে অংশটা খাড়া ও অনাবত, তাহার গ্রানাইট দেওয়ালটা প্রথমে হয় হলদে, পরে হয় মেটে সিন্দরের রং, পরে জরদা রঙের হইতে হইতে হঠাৎ ধসের ও তারপরেই কালো হইয়া যায় । ওদিক দিগন্তলক্ষীর ললাটে আলোর টিপের মত সন্ধ্যাতারা ফুটিয়া উঠে; অরণ্যানী ঘন অন্ধকারে ভরিয়া যায়, শাল ও পাহাড়ী বাঁশের ডালাপালায় বাতাস লাশ্বিয়া একপ্রকার শব্দ হয় রামচরিত ও জহরী মিং নেকড়ে বাঘের ভয়ে আগন জনালে, চারিধারে শিয়াল ডাকিতে শুরু করে, বনমোরগ ডাকে অন্ধকার আকাশে দেখিতে দেখিতে গ্রহ, তারা, জ্যোতিক, ছায়াপথ একে একে দেখা দেয়। পথিবী, আকাশ-বাতাস অপািৰব রহস্যভরা নিস্তব্ধতায় ভরিয়া আসে, তাঁবর পাশের দীঘ* ঘাসের বন দলাইয়া এক একদিন বন্যবঃাহ পলাইয়া যায়, দরে কোথায় হয়েনা উন্মাদের মত হাসিয়া উঠে, গভীর রায়ে কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাঁদ পাহাড়ের পিছন হইতে ধীরে ধীরে উঠিতে থাকে, এ যেন সত্যই গল্পের বইয়ে-পড়া জীবন । এক এক দিন বৈকালে সে ঘোড়ায় চড়িয়া বেড়াইতে যায়। শধেই উচু-নীচু অন্ধশকে তৃণভূমি, ছোটবড় শিলাখণ্ড ছড়ানো, মাঝে মাঝে শাল ও বাদাম গাছ । আর এক জাতীয় বড় বন্য গাছের কি অপৰেৰ অাঁকাবাঁকা ডালপালা, চৈত্রের রৌদ্রে পাতা ঝরিয়া গিয়াছে, নীল আকাশের পটভূমিতে পরশন্য ডালপুলো যেন ছবির মত দেখা যায়। অপর তীব্য হইতে মাইল-তিনেক দরে একটা ছোট পাহাড়ী নদী অকিয়া বাঁকিয়া গিয়াছে, অপ, তাহার নাম রাখিয়াছে বক্রতোয়া । গ্রীষ্মকালে জল আদেী থাকে না, তাঁহারই ধারে একটা শাল-ঝাড়ের নিচের একখানা পাথরের উপর সে এক একদিন গিয়া বসে, ঘোড়াটা গাছের ডালে বfiধয়া রাখে —স্থানটা ঠিক ছবির মত । অবণাভ বালর উপর অন্তহিত বনানদীর উপর ঢাকা চরণ-চিহ্ন—হাত কয়েক মাত্র প্রশস্ত নদীখাত, উভয় তাঁরই পাষাণময়, ওপারে কঠিন ও দানাদার কোয়াট’জাইট ও ফিকে হলদে রঙের বড় বড় পাথরের চাইয়ে ভরা, অতীত কোন হিম-যুগের তুযার নদীর শেষ প্রবাহে ভাসিয়া আসিয়া এখানে হয়ত আটকাইয়া গিয়াছে, সোনালী রঙের নদী-বাল হয়ত সবেণ"রেণ মিশানো, অস্ত সয্যের রাঙা আলোর অত চক-চক করে কেন নতুবা ? নিকটে সগন্ধলতা-কন্তুরীর জঙ্গল, খরবৈশাখী রৌদ্রে শাক শাটিগলি ফাটিয়া মগনাভির গন্ধে