পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b8 বিভূতি-রচনাবলী দুরবিসপি'ত চক্ৰবালরেখা দিগন্তের যতটুকু ঘেরিয়াছে, তাহারই কোন কোন অংশে, বহৃদরে নেমির শ্যামলতা অনতিপস্ট সাধ্যদিগন্তে বিলীন, কোন কোন অংশ ধোঁয়া ধোঁয়া দেখা-যাওয়া বনরেখায় পরিস্ফুট, কোন দিকে সাদা-সাদা বকের দল আকাশের নীলপটে ডানা মেলিয়া দরে হইতে দুরে চলিয়াছে’মন কোথাও বাধে না । অবাধ, উদার দটি পরিচয়ের গণ্ডি পার হইয়া যাইয়া অদশ্য অজানার উদ্দেশে ভাসিয়া চলে--- তাহার মনে হইল সত্য, সত্য, সত্য—এই শান্ত নিষ্ঠজন আরণ্যভূমিতে বনের ডালপালার আলোছায়ার মধ্যে পপিত কোবিদারের সুগন্ধে দিনের পর দিন ধরিয়া এক একটি নব জগতের জন্ম হয়—ঐ দরে ছায়াপথের মত তাহা দুরবিসপিত, এটুকু শেষ নয়, এখানে আরম্ভও নয়—তাহাকে ধরা যায় না অথচ এই সব নীরব জীবনমুহমত্তে অনন্ত দিগন্তের দিকে বিস্তত তাহার রহস্যময় প্রসার মনে মনে বেশ অনুভব করা যায়। এই এক বৎসরের মধ্যে মাঝে মাঝে সে তাহা অনুভব করিয়াছেও—এই অদশ্য জগৎটার মোহসপশ মাঝে মাঝে বৈশাখী শালমঞ্জরীর উন্মাদ সবাসে, সন্ধ্যা-ধন্সর অনতিপস্ট গিরিমালার সীমারেখোয়, নেকড়ে বাঘের ডাকে ভর জ্যোসনানাত শুভ জনহীন আরণ্যভূমির গাভীয্যে, অগণিত তারাখচিত নিঃসীম শানোর ছবিতে । বৈকালে ঘোড়াটি বধিয়া যখনই বক্রতোয়ার ধারে বসিয়াছে, যখনই অপণার মখ মনে পড়িয়াছে, কতকাল ভুলিয়া যাওয়া দিদির মুখখানা মনে প্লড়িয়াছে, একদিন শৈশব-মধ্যাহ্নে মায়ের-ম,খে-শোনা মহাভারতের দিনগলার কথা মনে পড়িয়াছে—তখনই সঙ্গে সঙ্গে তাহার ইহাও মনে হইয়াছে যে, যে-জীবন যে-জগৎকে আমরা প্রতিদিনের কাজকমে হাটে-ঘাটে হাতের কাছে পাইতেছি জীবন তাহা নয়, এই কমব্যস্ত অগভীর একঘেয়ে জীবনের পিছনের একটি সন্দের পরিপািণ, আনন্দ-ভরা সৌম্য জীবন লকোনো আছে—সে এক শাশ্বত রহস্যভরা গহণ গভীর জীবন-মন্দাকিনী, যাহার গতি কলপ হইতে কলপান্তরে ; দুঃখকে তাহা করিয়াছে অমতত্বের পাথেয়, অশ্রকে করিয়াছে অনন্ত জীবনের উৎসধারা--- আজ তাহার বসিয়া বসিয়া মনে হয়, শীলেদের বাড়ি চাকুরি তাহার দৃষ্টিকে আরও শকি দিয়াছিল, অন্ধকার অফিস ঘরে একটুখানি জায়গায় দশটা হইতে সাতটা পয্যন্ত আবদ্ধ থাকিয়া একটুখানি খোলা জায়গার জন্য সে কি তীব্র লোলুপতা, বর্ভূক্ষা–দই টিউশনির ফাঁকে গড়ের মাঠের দিকের বড় গিজটিার চড়ার পিছনকার আকাশের দিকে তৃষিত চোখে চাহিয়া থাকার সে কি হ্যাংলানি । কিন্ত; সেই বন্ধ জীবনই পিপাসাকে আরও বাড়াইয়া দিয়াছিল, শক্তির অপচয় হইতে দেয় নাই, ধরিয়া বধিয়া সংহত করিয়া রাখিয়াছিল । আজ মনে হয় চাঁপদানীর হেড মাস্টার যতীশবাবও তাহার বন্ধ-জীবনের পরম বন্ধ—সেই নিপাপ দরিদ্র ঘরের উৎপীড়িতা মেয়ে পটেশ্বরীও । ভগবান জুহাকে নিমিত্তস্বরুপ করিয়াছিলেন— তাহারা সকলে মিলিয়া চাঁপদানীর সেই কুলী-বস্তির জীবন হইতে তাহাকে জোর করিয়া দর করিয়া না দিলে আজও যে সেখানেই থাকিয়া যাইত । এমন সব অপরাহ্লে সেখানে বিশ স্যাকরার দোকানের সান্ধ্য আডায় মহা খুশিতে আজও বসিয়া তাস খেলিত । এ কথাও প্রায়ই মনে হয়, জীবনকে খুব কম মানষেই চেনে। জন্মগত ভুল সংস্কারের চোখে সবাই জীবনকে বুঝিবার চেষ্টা করে,দৈখিবার চেষ্টা করে, দেখাও হয় না, বোঝাও হয় না । তা ছাড়া সে চেস্টাই বা ক'জন করে ?-- অমর-কণ্টক তখনও কিছদ দর। অপর বলিল, রামচরিত, কিছু শুকনো ডাল আর শালপাতা কুড়িয়ে আন, চা করি । রামচরিতের ঘোর আপত্তি তাহাতে । সে বলিল, হজের, এসব বনে বড় ভালকের ভয় । অন্ধকার হবার আগে অমর-কণ্টকের ডাকবাংলোয় যেতে হবে । অপ বলিল, তাড়াতাড়ি চা হয়ে যাবে, যাও না তুমি । পরে সে বড় লোটাটায়