পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏌᎲ বিভূতি-রচনাবলী না। চাঁপদানীতে যে অপর নাই তাহা তিন বৎসর আগে জেলে ঢুকিবার সময় জানিত, কারণ তাহারও প্রায় এক বৎসর আগে অপর সেখান হইতে চলিয়া গিয়াছে । একদিন সে মন্মথদের বাড়ি গেল । তখন রাত প্রায় আটটা, বাহিরের ঘরে মন্মথ বসিয়া কাগজপত্র দেখিতেছে, সে আজকাল এটনি, খড়-শবশরের বড় নামডাকে ও পশারের সাহায্যে নতন বসিলেও দু’পয়সা উপজিন করে । মন্মথ যে ব্যবসায়ে উন্নতি করিবে, তাহার প্রমাণ সেদিনই পাইল । ঘণ্টাখানেক কথাবাত্তার পরে রাত সাড়ে-সাতটার কাছাকাছি মন্মথ যেন একটু উসখসে করিতে লাগিল—যেন কাহার প্রতীক্ষা করিতেছে। একটু পরেই একখানা বড় মোটরগাড়ি আসিয়া দরজায় লাগিল, একটি পয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছরের যুবকের হাত ধরিয়া দু'জন লোক ঘরে প্রবেশ করিল। প্রণব দেখিয়াই বুঝিল, যুবকটি মাতাল অবস্হায় আসিয়াছে। সঙ্গের লোক দুইটির মধ্যে একজনের একটা চোখ খারাপ, ঘোলাটে ধরণের-–বোধ হয় সে-চোখে দেখিতে পায় না, অপর লোকটি বেশ সুপরিষ । মন্মথ হাসিমুখে অভ্যর্থনা করিয়া বলিল, এই যে মল্লিক মশায়, আসন, ইনিই মিঃ সেনশর্ম" ?”ধসন, নমস্কার। গোপালবাব, বসন এইখানে । আর ও'কে আমাদের কনডিশনস সব বলেছেন তো ? ধরণে প্রণব বুঝিল মল্লিক মশায় বড় পাকা লোক উত্তর দিবার পর্বে তিনি একবার প্ৰণবের দিকে চাহিলেন । প্রণব উঠিতে যাইতেছিল, মন্মথ বলিল—না, না, বসো হে। ও আমার ক্লাসফ্রেড, একসঙ্গে কলেজে পড়তুম—ও ঘরের লোক, বলন আপনি ! মল্লিক মশায় একটা পৰ্টুলি খালিয়া কি সব কাগজ বাহির করিলেন, তাঁহাদের মধ্যে নিম্নসারে খানিকক্ষণ কি কথাবাত্ত হইল। সঙ্গের অন্য লোকটি দু-বার যুবকটির কানে-কানে ফিস-ফিস করিয়া কি কি বলিল, পরে যুবক একটা কাগজে নাম সই করিল । মন্মথ দু’বার সইটা পরীক্ষা করিয়া কাগজখানা একটা খামের মধ্যে পরিয়া টেবিলে রাখিয়া দিল ও একরাশ নোটের তাড়া মল্লিক মশায়কে গণিয়া দিল । পরে দলটি গিয়া মোটরে উঠিল । প্রণব অপর মত নিবোধ নয়, সে ব্যাপারটা বুঝিল । যুবকটির নাম অজিতলাল সেনশর্মা, কোনও জমিদারের ছেলে । যে জন্যই হউক, সে দই হাজার টাকার হ্যান্ডনোট কাটিয়া দেড় হাজার টাকা লইয়া গেল এবং মল্লিক মশায় তাহার দালাল, কারণ, সকলকে মোটরে উঠাইয়া দিয়া তিনি আবার ফিরিয়া আসিলেন ও পুনরায় প্রণবের দিকে বিরকিব দটিতে চাহিয়া মন্মথের সঙ্গে নিম্নসারে কিসের তক উঠাইলেন- সাড়ে সাত পাসেন্টের জন্য তিনি যে এতটা কষ্ট স্বীকার করেন নাই, এ কথা কয়েকবার শনাইলেন । ঠিক সেই সময়েই প্রণব বিদায় লইল । 象 পরদিন মন্মথের সঙ্গে আবার দেখা । মন্মথ হাসিয়া বলিল—কালকের সেই কাপ্তেনবাবটি হে—আবার শেষরাত্রে তিনটের সময় মোটরে এসে হাজির ৷ আবার চাই হাজার টাকা, —থেকে থাটি ফাইভ পাসেস্ট লাভ মেরে দিলাম। মল্লিক লোকটা ঘনঘন দালাল। বড়লোকের কাপেতন ছেলে যখন শেষরাতে হ্যাডিনোট কাটছেন, তখন আমরা যা পারি করে নিতে— আমার কি, লোকে যদি দেড়হাজার টাকার হ্যাণডনোট কেটে এক হাজার নেয় আমার তাতে দোষ কি ? এই-সব চরিয়েই তো আমাদের খেতে হবে ! কত রাত এমন আসে দ্যাখ না, টাকার যা বাজার কলকাতায়, কে দেবে ? প্রণব খাব আশ্চয্য হইল না । ইহাদের কায্যকলাপ সে কিছু কিছ জানে এক অপ্রকৃতিচ্ছ মাতাল যুবকের নিকট হইতে ইহারা এক রাত্রিতে হাজার টাকা অসৎ উপায়ে উপাজ’ন করিয়া বড় গলায় সেইটাই আবার বাহাদরি করিয়া জাহির করিতেছে । হতভাগ্য যুবকটির জন্য প্ৰণবের কষ্ট হইল—মত্ত অবস্থায় সে যে কি সই করিল, কত টাকা তাহার