পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত bషి গায়ের রং যে ফস" তাও নয়, তবে মুখে এমন কিছল আছে যাতে একবার দেখিলে বার বার চাহিয়া দেখিতে ইচ্ছা করে । ঘাড়ের কাছে একটা যৌতুকচিহ্ন, চুল বেশ বড় বড় ও কোঁকড়ানো । বিবাহের দিনও উভয় পক্ষের সন্মতিক্লমে ধায্য হইয়া গেল । দেবব্রত সঙ্গতিপন্ন গহসহ-ঘরের ছেলে । দুঃখ কষ্ট কাহাকে বলে জানে না, এ পয্যন্ত বরাবর যথেষ্ট পয়সা হাতে পাইয়াছে, তাহার পিসেমহাশয় অপত্রেক, তাঁহার সম্পত্তি ও কলিকাতার দ’খানা বাড়ি দেবব্রতই পাইবে । কিন্তু পয়সা অপব্যয় করার দিকে দেবব্রতর ঝোঁক নাই, সে খুব হিসাবী ও সতক এ বিষয়ে । সাংসারিক বিষয়ে দেবব্রত খুব হ:শিয়ার —পাটনায় যে চাকরিটা সে সম্প্রতি পাইয়াছে, সে শধে তাহার যোগাড়-যন্ত্র ও সুপারিশ ধরিবার কৃতিত্বের পুরস্কার—নতুবা কুড়ি-বাইশ জন বিলাত-ফেরত অভিজ্ঞ ইঞ্জিনীয়ারের দরখাস্তের মধ্যে তাহার মত তরণ ও অনভিজ্ঞ লোকের চাকুরি পাইবার কোন আশা ছিল না। শাঁখারিটোলায় দেবব্রতের পিসেমহাশয় তারিণী মিত্রের বাড়ি হইতেই দেবব্রত বিবাহ করিতে গেল । পিসিমার ইচ্ছা ছিল খুব বড় একটা মিছিল করিয়া বর রওনা হয়, কিন্তু পিসেমহাশয় বুঝাইলেন ও সব একালের ছেলে—বিশেষ করিয়া দেবব্রতর মত বিলাত-ফেরত ছেলে— পছন্দ করিবে না । মায়ের নিকট বিবাহ করিতে যাইবার অনুমতি প্রাথনা করিবার সময় দেবব্রতর চোখ ভিজিয়া উঠিল—বেগগত স্বামীকে মরণ করিয়া দেবব্রতর মা-ও চোখের জল ফেলিলেন—সবাই বকিল, তিরস্কার করিল । একজন প্রতিবেশিনী হাসিয়া বলিলেন—দোরধরণীর টাকা কৈ ?-- 鲁 দেবব্রতর পিসিমা বলিলেন—আমার কাছে গণে নিও মেজবোঁ । ও-কি দোর-ধরা হ’ল ? আমার ছেলেবেলায় আমাদের বাঙাল দেশে নিয়ম ছিল দেখেছি, সাতজন এয়ো আর সাতজন কুমারী এই চৌদ্দজনকে দোর-ধরণীর টাকা দিয়ে তবে বর বেরতে পেত বাড়িথেকে। একালে তো সব দাঁড়িয়েছে— দেবব্রত একটুখানি দাঁড়াইল । ফিরিয়া বলিল—মা, শোন একটু।-- আড়ালে গিয়া চুপি চুপি বলিল—চাটুয্যে-বাড়ির মেয়েটা দোর ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিল, আমি জানি, ছোট পিসিমা তাকে সরিয়ে দিয়েছেন—এ-সবেতে আমার মনে বড় কষ্ট হয়, মা । এই দশ টাকার নোটটা রাখো, তাকে তুমি দিও—কেন তাকে সরালে বল তো—আমি জানি অবিশ্যি কেন সরিয়েছে—কিন্তু এতে লোকের মনে কস্ট হয় তাও ওরা বোঝে না ! মা বলিলেন—ও-কণা তোর ওদের বলবার দরকার নেই–টাকা দিলি আমি দেবো এখন । ছোট ঠাকুরঝির দোষ কি, বিধবা মেয়েকে কি বলে আজ সামনে রাখে বল না ? হিন্দরে নিয়মগুলো তো মানতে হবে, সবাই তো তোমার মত বেহ্মজ্ঞানী হয়নি এখনো । মেয়েটার দোষ দিইনে, তার আর বয়স কি—ছেলেমানষে—সে না হয় অত বোঝে-সোঝে না, আমোদে নেচে দোর ধরবে বলে দাঁড়িয়েছে—তার বাপ-মায়ের তো এটা দেখতে হয়। শুভকাজের দিন বিধবা মেয়েকে কেন এখানে পাঠানো বাপ ? তা নয়-rগরীব কিনা, পাঠিয়েছে—যা কিছ ঘরে আসে—। যাক । আমি দেবো এখন—তা হ’্যা রে, পাঁচটা দিলেই তো হ’ত—এত • • ۔ ? ہ5Fچt —না মা, ঐ থাক, দিও । ছোটপিসিন্ধাকে বলো বুঝিয়ে ওতে শুভকাজ এগোয় না, আরও পিছিয়ে যায় । দু-তিনখানা বাড়ির মোড়ে চাটুয্যে-বাড়িটা। ইহারা সবাই ছাপাখানায় কাজ করে, বন্ধ চাটুয্যে মহাশয়ও আগে কম্পোজিটরের কাজ করিতেন, আজকাল চোখে দেখেন না বলিয়া ছাড়িয়া দিয়াছেন। আজকাল তাঁহার কাজ প্রতিবেশীর নিকট অভাব জানাইয়া আধলি ধার করিয়া বেড়ানো । দেবরত ইহাদের সকলকেই অনেক দিন হইতে চেনে।