পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سbه بS আমি ঘাড় নেড়ে বল্লাম-ও বুঝি নে। হাত দিয়ে দেখিয়ে বল্লাম মুখ ধোয়ার জল আনতে। চম্প.জল নিয়ে এল। নতুন ওষুধ বাটা আমার পায়ে লাগিয়ে দিলে এবং একটা জাম বাটিত কি একটা জিনিস আনলে, শালপাতা দিয়ে ঢাকা । হাত দিয়ে দেখিয়ে বল্লাম—কি ওতে ? --মাস্তি । তার মানে বুঝলাম না –দেখি বাটি নিয়ে এসো— চম্প.আমার ইঙ্গিত বুঝে বাটি নিয়ে এল, ও হরি—এক বাটি ভাত । আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বজাম—মাস্তি ? চম্প হেসে প্রায় গড়িয়ে পড়ে আর কি। সে আমার ভাষাজ্ঞানের দৌড় বুঝে নিয়েচে । হাসিমুখে ঘাড় নেড়ে বঙ্গে-হোই। এইভাবে ও আমার মনের ভাব আন্দাজে বুঝে নিত, আমি বুঝে নিতাম ওর । সেই ঘরে কেটেছিল দশ দিন। চম্প,কি সেবাটাই করেছিল এই দশদিন। ভাষা না বুঝলেও আমি ওর ভালোবালা বুঝতাম, নয়নের স্নেহদৃষ্টি বুঝতাম। আমি ওর হাত ছুটি ধরে একবার আবেগের মাথায় বলেছিলাম—চিরকাল মনে থাকবে তোমার কথা চম্প, কখনো ভুলবো না তোমায়। চম্প কিছু চায় নি আমার কাছে। বা করেছিল, সম্পূর্ণ নিঃস্বাৰ্থ-ভাবে। এমনি দ্বল্পত মন ছিল ওর। আমিও তখন গরীব, তবুও আসবার দিন সাইকেলে ওঠবার সময়, ওকে আমার হাতঘড়িটা দিতে গিয়েছিলাম, ও নেয় নি। আমার জামার বোতাম দেখিয়ে বল্পে-ওট। নেবে। মাকা হোকে বল্লাম-বুঝিয়ে দাও, এ সোনার নয়, পেতলের ওপর গিন্টি করা। এর দাম ছ’আন পয়সা । এ নিয়ে কি হবে ? চম্প, গুনলে না, বল্পে—না, বোতাম নেবো । সরলা হো বালিকা। বা চায় তাই দিলাম, ছ’আনা পয়সার চারটি পেতলের বোতাম । অনেক দিনের কথা হয়ে গেল সে-সব। মধ্যে অবস্থা যখন দিনকতক খুবই খারাপ হয়ে গেল, রাস্তার কনট্রাক্টরি করতে গিয়ে গরবাই-নালার সিমেন্টের সেতু দ্ব-ছবার জলের তোড়ে ভেঙে গেল, সাড়ে ভিন হাজার টাকা আমার পুজি থেকে বেরিয়ে গেল, জীবন অভিষ্ঠ হয়ে উঠলো পাওনাদারদের অত্যাচারে—তখন সামনে দেখলাম সৰ্ব্বস্বাস্ত হওয়ার পথ জেলের ফটক পৰ্য্যম্ভ বিষ্কৃত হয়ে রয়েচে—কতবার তখন ভেবেচি, সব ফেলে পালিয়ে বাবে বলিৰা গ্রামে মাকা হো’র বাষ্ঠী। সেই ঘন অরণ্যে শালস্কুলের আলন্ত-মাখানো দিনগুলিতে চম্পু হো’র সঙ্গে নীরব ভাষার কথোপকথন । সেই নির্জন রান্ত্রিগুলির নিবিড় মোহ।••• বছরের পর বছর কেটে গিয়েছিল। - বাড়ী গাড়ী করেছিলাম, বড়লোক হয়েছিলাম । চম্পূৰ্ব দেখা পাই নি, আজকার দিনটি ছাড়া।