পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 বিভূতি-রচনাবলী শরৎ চীৎকার করে রেগে তক্তপোশ চাপড়ে কথা বলে, আশা ধীরভাবে যুদ্ধস্বরে কথা বলে । শরৎ দিন দিন বিস্মিত হচ্ছে, কে জানতো সেই আশা এই মানুষ । নিধু বিন্ধুকে নিয়ে গিয়ে শরতের সামনে দাড় করিয়ে সেদিন বললে—ছেলে দুটো ৰে একেবারে বয়ে গেল, এরা ক’রে থাবে কি ? এদের উপায় কি করচো বড়দা ? —আমি কি উপায় করব, তুমি এখন ওদের গার্জেন হয়েচে, তুমি করে— —আমি তোমার পায়ের জুতোর তলা বড়ম্বা, আমায় অমন কথা বোলো না । —তোমাকে আর মিষ্টি কথা শোনাতে হবে না আমাকে, যাও এখান থেকে— — এদের উপায় কি করৰে করে বড়দা, পায়ে পড়ি তোমার । —মাইনে দেবে কে ? —তুমি! —কেন আমি দেবো ? আমার— শরতের উত্তরের বাকি অংশটুকু ছাপার উপযুক্ত নয় । আশা চুপ ক'রে থেকে বল্পে—তোমার পায়ে পড়ি দাদা—এদের লেখাপড়ার হিল্পে করে। —বঁfদর হয়ে গেল একেবারে । —তবে তো আমার— শরতের সবটুকু উত্তর ছাপবার পুনরায় অধোগ্য হ’ল। আশালতা পরদিন নিজে কোথা থেকে টাকা জোগাড় ক’রে বিধু নিধুকে দু’মাইল দূরবর্তী সোনাখালি-বাকৃলার মাইনর স্কুলে ভৰ্ত্তি ক’রে দিল । ছেলে দুটো বদ্ধ হয়ে গিয়েছিল—নিজে জোর ক’রে ওদের স্কুলে পাঠিয়ে দিত, নিজে সকালে বিকালে পড়াতে বসাতো। আশা নিজে লেখাপড়া জানত সামান্তই। গ্রামের অমৰ্ত্ত গুরুমশায়ের পাঠশালায় বাংলা সরলপাঠ তৃতীয় ভাগ পর্ষপ্ত । কিন্তু নিজের চেষ্টাতে সে অনেক শিখেছিল। ওর মামার বাড়ী ছিল কলকাতার কাছে এড়েদ’ । মা বেঁচে থাকতে সেখানে গিয়ে দু’তিন মাস থাকতে । এড়ো” থেকে একবার মাৰীমার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিল। রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা শুনেছিল। আমি অন্তত: ওর কাছে একখানা কথামৃত দেখেচি। আশা রামায়ণ মহাভারত পড়তে, গীত দু’বেল পড়তে, বাংলা কবিতা কিছু কিছু পড়তো। সৎমাকে বলতো—নিধু খুব বুদ্ধিমান মা, ও পড়ালে মাহুষ হবে— মা বলতো—বিধুকে কেমন দেখলি ? —বুদ্ধি নেই এর মত। তবে কিছু হবেই। —তুই চেষ্টা কর, হয়ে যাবে। আশা যেন উঠে পড়ে লেগে গেল নিখুঁকে মানুষ করতে। শয়নে স্বপনে ওর এই এক ভবেন । নিখুব এতটুকু বেচাল দেখলে নিজে শাসন করে, কড়া পাহারায় পড়াশুনো করায়, একদিন স্কুল কামাই করলে ভাত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অথচ আশা আর বিধু নিৰুর বয়সের তফাৎ খুব বেশি নয়। আট বছরের কি দশ বছরের।