পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী وك ه (يا –কিছু দিতে হবে না। তুমি কথা বলে আমি শুনি— কিন্তু কথা কইতে গণেশদাদা জানে না । তার সংকীর্ণ জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা সে সঞ্চয় করেছে আজ পঞ্চাশ-পঞ্চায় বছর ধরে, সে যতই সামান্য হোক, বলতে জানলে তাই নিয়েই চমৎকার কথার জাল রচনা করা যেতে যা আকাশকে বাতাসকে রাঙিয়ে দিতে পারতো, শুকনে ডালে ফুল ফোটাতে পারতো—চামটার বিলের পদ্মফুলের পদ্মগন্ধি রেণু আমার নাকে উড়িয়ে নিয়ে আসতে পারতো। গণেশদাদা সে সব পারে না। তবুও ওর সঙ্গ আমার এত ভালো লাগে। কথার দরকার হয় না, ওর নিরুপকরণ ও অনাড়ম্বর সাহচৰ্য্যই আমার মনে একটি মৌন লিরিকের আবেদন বহন করে আনে। সেবার চলে আসার পর পাঁচ ছ' বছর হবে গণেশদাদার সঙ্গে আবার দেখা । গণেশদাদার মাথার চুল পেকে একেবারে শনের মুড়ি হয়ে গিয়েচে, পিঠের দিকটা বেঁকে একটু কুঁজে হয়ে গিয়েচে—সামান্য । 龜 শরৎকাল। পূজোর ছুটি। সেবার নদীতে একটু বন্যার আভাস দেখা গিয়েছে। কাশফুল ফুটে আলো করেচে নদীর দুই পাড়। নদীর ধারের মাঠে গণেশ গরু চরাচ্চে, খুঁজতে খুঁজতে বার করলাম ওর মাথার চুল আর ওর চারিপাশে কাশফুল একই রকম দেখতে। বৃদ্ধ গণেশদাদা সেই পাঁচ-সাত বছর আগের মত তাল পাতার ছাতি মাথায় দিয়ে লাঠি হাতে গরু চরাচ্ছে। কোচড় থেকে বের করে কি খাচ্ছিল, আমায় দেখে লজ্জিত স্বরে বললে—সৈরভির মা দুটে চাল ভাজা দেলে, বললে, গরম-গরম একথোলা নামিয়ে ফেললাম, তুমি দুটো নিয়ে যাও—তাই নিয়ে এল্যাম । বেশ লাগে।—ত এলে কবে দাদাঠাকুর ? অার দ্যাথো বডড বুড়ো হয়ে পড়িচি, তুমি আসচে, কিন্তু মুই বুঝতে পারলাম না । বলি, কেড আসে বাবুপান ? চকি তেমন আর ঠাওর হয় না— —চালভাজা খাচ্চ, দাত আছে ? —তা আছে তোমার বাপমায়ের আশীব্বাদে। বলি ও কথা যাক, বিয়ে-খাওয়া করেচ ? —না । বিয়ের আর বয়েস নেই। —কি কথা বলে দাদাঠাকুর ? তোমারে কোলে করে মানুষ করলাম, কালকের কাচা ছেলে, বয়েস ফুইরে গেল তোমার ? ও কথা বোলো নি। মা লক্ষ্মীকে দেখে চক্ষু বুজোবো। বিয়ে করো—কি করচে’ আজকাল ? —চাকরি করচি । —বেশ বেশ । মোদের শুনেও স্থখ । তা বোসে । এই গাছটার ছিয়াতে বোসো— হাদে, তোমরা টুপি পরো ? বেনার ডাটার খাস টুপি বুনি দিতি পারি। পস্কার সায়েবের টুপি । নেবা ? —না, আমি সায়েবের টুপি পরিনে। —বোসো। জিরোও, বড্ড রাদুর। কি সুন্দর নীল আকাশ কাশফুলে ভর। বিস্তীর্ণ মাঠের ওপরে হুমড়ি খেয়ে অাছে। সাধারণ