পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীলগঞ্জের ফালমন সাহেৰ ፀoፃ ধরনের নীল নয়, সে এক অদ্ভূত ময়ুরকষ্ঠ রংয়ের নীল। ওপর থেকে হু হু হাওয়া বইচে; গণেশাদার মাথার সাদা চুল বাতাসে কাশফুলের মত উড়চে। আমার কাছে ছবিটি বেশ লাগে । - গণেশদাদা এইবার চালভাজা খাওয়া শেষ করে নদীর পাড় বেয়ে জলে নেমে দুহাতে অঁাজ লা করে জল খেয়ে নিয়ে সরস তৃপ্তির সঙ্গে 'আ' বলে একটি দীর্ঘস্বর উচ্চারণ করলে। আমার কাছে এসে বললে—তামুক খাব ? —খাই নে। —দাড়াও সাজি। মোর দা-কাটা খরসান তামাক, বড় তলব ! কিছু নেই, শুধু তামাক আর গুড়। বাজারের তামুকে চুন মেশায়। বলি হাদে দাদাঠাকুর, একটু শুধোও দিকি ? —কি ? —সেই ইনজিরি। মুই মুখস্ত বলবো ? ওভার মানে ওপর, ওয়াটার মানে জল, বাড়, মানে পাখী, বালির ইনজিরি স্যাও, মাছের ইনজিরি ফ্লাই— -सैश् —কি, মাছের ইনজিরি ফ্লাই নয় ? —না। তবে কি এ্যান্ট ? —না, এ্যান্ট মানে পিপড়ে। মাছের ইংরিজি ফিশ, মাছির ইংরিঞ্জি ফ্লাই। —হঁ্যা, ঠিক ঠিক। বলি হাঙ্গে বয়েস হয়েচে আজকাল অনেক, সব কথা ঝঙ্করে মনে পড়ে না, বেস্মরণ হয়ে যাই। আর তুমি না এলি তো চর্চা হয় না, সব মুরুকু—কার সঙ্গে ইনজিরি বলবো বলে দিকি ? আর এক ডজন ইংরিজি শব্দ বসে বসে আমার জ্ঞানপিপাসু শুভ্রকেশ ছাত্রকে শিক্ষা দিলাম, সেই কাশফুল-ফোটা চরে বসে শরতের অপরাত্ত্বে। আগের শেখা শব্দগুলোও একবার সে বালিয়ে নিলে মহা উৎসাহে । তারপর সেই বিদ্যার বোঝা বহন করে সেই বছরের মাঘ মাসে নিমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে গণেশদাদা পরলোক যাত্রা করলে। পর বৎসর পুনরায় দেশে ফিরে গিয়ে আর ওকে দেখতে পাই নি। কি বৈষয়িক উন্নতির দিক থেকে, কি ইংরিজি শিক্ষার দিক থেকে গণেশদাদা সারাজীবন প্রথম সোপানের দিকেই রয়ে গেল বটে, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওর মধ্যে এমন কিছু ছিল, যার সাহায্যে ও সব সোপান অতিক্রম করে, আমাদের অনেককে অতিক্রম করে, অনেক উচুতে গিয়ে পৌঁছে ছিল। তাই আজকার দিনে বার বার তার কথা মনে পড়ে।