পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুসন্ধান \34ס নারাণ মাস্টার একবার ভাবলেন স্ত্রীকে ছেলের গুণের কথা সব খুলে বলেন । র্তার উপদেশ সত্ত্বেও সে আবার তার মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলেচে। কিন্তু সরলা পত্নীর মুখের দিকে চেয়ে নারাণ মাস্টার সে কথা চেপে গেলেন। বাইরে থেকে ছেলেরা ডাক দিলে—বাড়ী আছেন স্যার ? ছেলেরা পড়তে এসেচে। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নারাণ মাস্টার । নারাণ মাস্টার স্কুলে গেলেন। হেড মাস্টার আজ আর কিছু বলেন না । ক্লাসে ক্লাসে ছেলেরা তাকে নিজের নিজের ক্লাসে পাবার জন্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখায়। ইন্দুভূষণের ক্লাসে নারাণ মাস্টার ঢোকেন। একটু পরে হেড মাস্টার এসে গম্ভীর ভাবে ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে জানিয়ে গেলেন, এ ক্লাসটা তার নয়। রুটিনট দেখে ঢুকলেই তো হয়। অঙ্ক কষাতে কষাতে কি করে এসে পড়ে সূর্য্যের কথা । সূর্য্য আছে বলে, জগতে রঙের খেলা অদ্ভূত-নারাণ মাস্টার বোঝান। তা থেকে নিউটনের কথা এসে পড়লো—জ্ঞান তপস্বী নিউটন। বাইরে দাড়িয়ে হেড মাস্টার শোনেন । নfরাণ মাস্টারের জনপ্রিয়তা হেড মাস্টারের চক্ষুশূল । g একটু পরে মাখনলাল স্বর স্কুলে এসে ক্লাসে ক্লাসে বেড়াতে বেরুলেন। মাখনলাল স্বর দু-তিনটি তেলের কলের মালিক। কালো, মোটাসোটা চেহারা, মুখখানাতে দাম্ভিকতা মাখানে। লেখাপড় বিশেষ কিছু জানেন না, টাকার জোরে স্কুলের সেক্রেটারি হয়েচেন বলে শিক্ষকদের ওপর প্রভুত্ব একটু বেশি করেই খাটান। বিভিন্ন ক্লাসে ঢুকে পরীক্ষা করেন। প্রথমে ক্ষেত্রবাবুর ক্লাস। ক্ষেত্রবাবু সসন্ত্রমে উঠে দাড়ান। বলেন, পড়িয়ে যান—আমি শুনি । বাংলা সাহিত্য পড়াচ্ছেন ক্ষেত্রবাৰু। কুরমশায় বলেন, ও সব কি আর কবিতা ? কবিতা ছিল সেকালে যদু মুখুয্যের। কুক্ত পৃষ্ঠ স্থ্যজদেহ উষ্ট্র সারি সারি, কি আশ্চৰ্য্য শোভাময় যাই বলিহারি, ইত্যাদি। কৌটো খুলে পান খান ক্লাসের মধ্যেই। তারপরে যদুবাবুর ক্লাস । ইতিহাস পড়াচ্ছেন যদুবাবু, মন দিয়ে শিবাজির জীবনী বর্ণনা করচেন ছেলেদের কাছে। মাখন মুর এক অবাস্তর প্রশ্ন করে বসলেন—বলো দিকি, দাশু রায় পাচালি লিখেছিলেন কত সালে ? মাস্টার বলে দাও না ওদের । দাশু রায়—আহা, অমন গান আর কেউ বাধতে পারবে না— তারপর নারাণবাবুর ক্লাস। নারাণবাৰু মশগুল হয়ে গিয়েচেন অধ্যাপনায় ; কিন্তু তিনি অঙ্ক ছেড়ে ঘরীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করচেন ক্লাসে। মাখন স্থর ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেনআপনি না অঙ্কের মাস্টার ? আমি শুনেচি আপনি ক্লাসের পড়া না করিয়ে ছেলেদের কাছে ৰাজে গল্প করেন ।