পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড).djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিভূতি-রচনাবলী

— হুঁ, তুই এত কথা কার কাছে শিখলি? মার কাছে? বেশ! চাঁদ ভালো লাগে?

— হুঁ-উ।

— তবে দ্যাখ তো, এমন জিনিস যে তৈরী করেছেন, তাঁকে ভালোবাসা যায় না?

— আমি ভালোবাসবো।

— নিশ্চয়। কিছু কিছু ভালবেসো?

— তুমি ভালোবাসবে?

— হুঁ।

— মা ভালোবাসবে?

— হুঁ।

— আমি ভালোবাসবো।

— বেশ।

— ছোট মা ভালোবাসবে?

— হুঁ।

— তাহলে আমি ভালোবাসবো।

— নিশ্চয়। আজ আকাশের চাঁদ তোকে ভালো করে দেখাবো।

— চাঁদের মধ্যে কে বসে আছে?

— চাঁদের মধ্যে কিছু নেই রে। ওটা চাঁদের কলঙ্ক।

— কনঙ্ক কি বাবা? কনঙ্ক?

— ওই হোলো গিয়ে পেতলে যেমন কলঙ্ক পড়ে তেমনি।

ছেলে অবাক হয়ে বাপের মুখের দিকে তাকায়। কি সুন্দর, নিষ্পাপ অকলঙ্ক মুখ ওর। চাঁদে কলঙ্ক আছে, কিন্তু থোকার মুখে কলঙ্কের ভাঁজও নেই।

ভবানী বাঁড়ুয্যে অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকান।

কোথায় ছিল এ শিশু এতদিন?

বহুদূরের কোন অতীতের মোহ তার হৃদয়কে স্পর্শ করে। যে পৃথিবী অতি পরিচিত, প্রতিদিন দৃষ্ট- যেখানে বসে ফণি চক্কত্তি সুদ কষেন, চন্দ্র চাটুয্যের ছেলে জীবন চাটুয্যে সমাজপতিত্ব পাবার জন্যে দলাদলি করে- সহস্র পাপ, ক্ষুদ্রতা ও লোভে যে পৃথিবী ক্লেদাক্ত— এ যেন সে পৃথিবী নয়। অত্যন্ত পরিচিত মনে হোলেও এ অত্যন্ত অপরিচিত, গভীর রহস্যময়। বিরাট বিশ্বযন্ত্রের লয়-সঙ্গতির একটা মনোমুগ্ধকর তান।

পিছনকার বাতাস আকন্দ ফুলের গন্ধে ভরপুর। স্তব্ধ নীল শূন্য যেন অনন্তের ধ্যানে মগ্ন।

আজকার এই যে সঙ্গীত, জীবজগতের এই পবিত্র অনাগত ধ্বনি আজ যে সব কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হচ্চে পাঁচশত কি হাজার বছর পরে সে সব কণ্ঠ কোথায় মিলিয়ে যাবে! ইছামতীর জলের স্রোতে নতুন ইতিহাস লেখা হৰে কালের বুকে।

আজ এই যে ক্ষুদ্র বালক ও তার পিতা অপরাহ্নে নদীর ধারে বসে আছে, কত স্নেহ,