পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড).djvu/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যে অরণ্যের ঋণ প্রায় সন্থাই শোধ করেছেন ‘আৱশ্যক” উপন্যাসে-কিন্তু ইছামতীর বৃহত্তর ঋণ আরও ভাল ক’রে শোধ করার জন্তু দীর্ঘকাল অপেক্ষা করেছেন-মনে মনে বারবার খসড়া করেছেন ও আবার মনে মনেই বাতিল করেছেন-বোধ করি কোনোটাকেই নদীজননীর উপযুক্ত মনে হয় নি। আরও ভাল পরিকল্পনার জন্য যত্ন ক’রে মনের কুলুঙ্গিতে তুলে রেখেছেন সে সংস্কয়াকে । একেবারে তঁার পরমাম্বুৱা শেষপ্রান্তে (বাৰ্থক্য নয়-ঠােৱ যা স্বাস্থ্য এবং সৃজনীশক্তি ছিল তাতে সে সময়টা তার শক্তির মধ্যাপ, মধ্যবয়স বলাই উচিত) যখন শ্ৰীমান গৌরীশঙ্কর ভট্টাচাৰ্য একটি সাময়িক পত্রের জন্য ধারাবাহিক উপন্যাসের কথা বলে, তখন বর্তমান নিবন্ধ-লেখকই অনুরোধ করে তঁর বহু-সঙ্কল্পিত ইছামতী-গাথা লেখার জন্য । তিনিও উৎসাহিত হয়ে ওঠেন সঙ্গে সঙ্গেই। ইছামতী রচনায়ু এইটেই পূর্ব ইতিহাস। ইছামতী যে রূপে বেরিয়েছে সে ভাবে বই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল না পৃষ্ঠার। ইছামতীয় পৃষ্ঠপট একশত বৎসর ব্যাপী সমাজজীবনের ইতিহাস রচনা করবেন। এই রকমই স্কির ছিল। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে অনেকদিন অনেক আলোচনাও হয়েছে। তঁর সঙ্কল্প ছিল তিনি অথবা চার খণ্ডে এই ‘এপিঙ্ক’ উপন্যাস শেষ হবে, তার প্রত্যেকটিই হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, “পথের পাঁচালী” “অপরাজিত’র মতো। বড় ক্যানভাসে তিনি কিছু লেখেন নি, এরকম অঙ্গুযোগ যে কোন কোন মহলে তঁৱে সম্বন্ধে উঠেছে, ওঠে-সে সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি । তাঁর ইচ্ছা ছিল এই সুবৃহৎ উপন্যাস লিখে তার উপযুক্ত জবাব দেবেন। কাল অকস্মাৎ নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে বঙ্গ-সরস্বতীর কোল থেকে ছিনিয়ে না নিলে, অন্তত আর দুটাে বছর বাঁচলেও এই উপন্যাস এবং 'কাজল লেখা শেষ হ’ত । কাজলও এই নিবন্ধ-লেখকের অনুরোধেই লিখতে শুরু করেছিলেন, মনে মনে একটা ছক কেটেও নিয়েছিলেন, কিন্তু তাৱ কৈফিয়ৎ টুকু ছাড়া আর কিছু লেখাস্ত্ৰ সময় পান নি । এই প্রসঙ্গে অনশ্বরের উল্লেখ করলে খুব একটা অবাস্তুর হবে না বোধ হয়। ইসমাইলপুর আজমাবাদের জঙ্গল তার স্বারাই বিনষ্ট হয়েছে-এ সম্বন্ধে তার একটা সুগভীৱ বেদনাবোধ ছিল- তার কল্পিত নায়ক সে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করবে-এই রকম একটা কল্পনা নিয়েই অনশ্বর শুরু করেন। স্বাক্টর আদিমতম চিঙ্ক এখনও যা আছে- তা হ’ল গাছ । অতিকায় প্রাণীর দল অবলুপ্ত হযেছে, কিন্তু অতিকায় গাছ এখনও আছে কোথাও কোথাও, কয়েক হাজার বছরের গাছ, এই কথা তেবেই প্ৰধানত বোধ হয় “অনশ্বর” নাম দেওয়া হয়েছিল । সেই জঙ্গলের জন্য বাঙ্গালীর ছেলে নিজের স্বাৰ্থ বিসর্জন দিল, টাকায় জন্য প্রকৃতির বিপুল সম্পদ নষ্ট করতে রাজী হ’ল না-এই রকমই একটা কাহিনীর আবছা ধারণা নিয়ে ঐ উপন্যাস রচনায় প্ৰবৃত্ত হয়েছিলেন। অবশ্য শেষ পৰ্যন্ত কী হ’ত ত’ কেউ জানে না, হয়ত তিনি নিজেও জানতেন না। কোন শিল্পীই বোধহয় কোন মহৎ শিল্প স্বাচনার প্রাকালে কল্পনা করতে পারেন না-গঁঠীয় স্থািট শেষ পৰ্যন্ত কী রূপ নেবে।