পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত بی هوا( পথ ধরিল । সকলকে সংকীর্ণমনা বলিয়া গালি দিল, একটা বিদ্রপাত্মক গল্প বলিয়া অবশেষে টেবিলের উপর একটা কিল মারিয়া এমার্সনের একটা কবিতা আবৃত্তি করিতে করিতে বক্তৃতার উপসংহার করিল। ছেলেদের দল খুব গোলমাল করিতে করিতে হলের বাহির হইয়া গেল। বেশীর ভাগ ছেলে তাহাকে যা-ত বলিতেছিল—নিছক বিদ্যা জাহির করিবার চেষ্টা ছাড়া তাহার প্রবন্ধ যে অন্ত কিছুই নহে, ইহাও অনেকের মুখে শোনা যাইতেছিল। সে শেষের দিকে এমার্সনের এই কবিতাটি আবৃত্তি করিয়াছিল— I am the owner of the sphere Of the seven stars and the solar year.” তাহাতেই অনেকে তাহাকে দাস্তিক ঠাওরাইয়া নানারূপ বিদ্রুপ ও টিটকারি দিতেও ছাড়িল না। কিন্তু অপু ও-কবিতাটায় নিজেকে আদৌ উদ্দেশ করে নাই, যদিও তাহার নিজেকে জাহির করার স্পৃহাও কিছু কম ছিল না বা মিথ্যা গর্ব প্রকাশে সে ক্লাসের কাহারও অপেক্ষ কম নহে, বরং বেশী । তাহার নিজের দলের কেহ কেহ তাহাকে ঘিরিয়া কথা বলিতে বলিতে চলিল। ভিড় একটু কমিয়া গেলে সে সকলের নিকট হইতে বিদায় লইয়া কলেজ হইতে বাহির হইতে যাইতেছিল, গেটের কাছে একটি সতেরো আঠারো বছরের লাজুক প্রকৃতির ছেলে তাহাকে বলিল—একটুখানি দাড়াবেন ? অপু ছেলেটিকে চেনে না, কখনও দেখে নাই। একহারা, বেশ মুত্র, পাতলা সিস্কের জামা গায়ে, পায়ে জরির নাগরা জুতা। ছেলেটি কুষ্ঠিতভাবে বলিল,—আপনার প্রবন্ধটা আমায় একটু পড়তে দেবেন ? কাল আবার আপনাকে ফেরত দেব। অপুর আহত আত্মাভিমান পুনরায় হঠাৎ ফিরিয়া আসিল । খাতাখানা ছেলেটির হাতে দিয়া বলিল,—দেখবেন কাইগুলি, যেন হারিয়ে না যায়—আপনি বুঝি— সায়েন্স –ও ! পরদিন কলেজ বসিবার সময় ছেলেটি গেটেই দাড়াইয়াছিল—অপুর হাতে খাতাখানা ফিরাইয়া দিয়া ছোট একটি নমস্কার করিয়াই ভিড়ের মধ্যে কোথায় চলিয়া গেল। অষ্টমনস্কভাবে ক্লাসে বসিয়া অপু খাতাখানা উন্টাইতেছিল, একখানা কি কাগজ খাতাখানার ভিতর হইতে বাহির হইয়া ইলেকট্রিক পাখার হাওয়ার খানিকটা উড়িয়া গেল। পাশের ছেলেটি সেথান কুড়াইয়া তাহার হাতে দিলে সে পড়িয়া দেখিল, পেন্সিলে লেখা একটি কবিতা— তাহাকে উদ্দেশ করিয়া —