পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵՏ বিভূতি-রচনাবলী প্রতিধ্বনি। গাছপালা, নদী, মাঠ ভালবাসে বলিয় দেওয়ানপুরে তাহাকে সবাই বলিত পাগল । একবার মাঘমাসের শেষে পথে কোন গাছের গায়ে আলোকলতা দেখিয়া রমাপতিকে বলিয়াছিল,—কেমন সুন্দর ! দেখুন দেখুন রমাপতিদা— রমাপতি মুঝিয়ানার স্বরে বলিয়াছিল মনে আছে—ওসব যার মাথায় ঢুকেছে তার পরকালটি একেবারে ঝরঝরে হয়ে গেছে। পরকালটা কি জন্ত যে ঝরঝরে হইয়া গিয়ছে, একথা সে বুঝিতে পারে নাই—কিন্তু ভাবিয়ছিল রমাপতিদা স্কুলের মধ্যে ভাল ছেলে, ফাস্ট ক্লাসের ছাত্র, অবশ্যই তাহার অপেক্ষা ভাল জানে। এ পর্যন্ত কাহারও নিকট হইতেই সে ইহার সায় পায় নাই, এই এতদিন পরে ইহাকে ছাড়া। তাহ হইলে তাহার মত লোকও আছে!”সে একেবারে স্বষ্টিছাড়া নয়!" অনিল বলিল—দেখুন, এই এত ছেলে কলেজে পড়ে, অনেকের সঙ্গে আলাপ ক’রে c7(of-styl otro Ri—dull, unimaginative mind ; ryts *H HIŞ "frog, বিশেষ কোন বিষয়ে কৌতুহলও নেই, জানবার একটা সত্যিকার আগ্রহও নেই। তাছাড়া, এত ছোট কথা নিয়ে থাকে যে, মন মোটে—মানে, কেমন যেন,—যেন মাটির উপর hop ক’রে ক’রে বেড়ায় ! প্রথম সেদিন আপনার কথা শুনে মনে হ’ল, এই একজন অন্ত ধরণের, এ দলের নয় । অপু মুছ হাসিয়া চুপ করিয়া রহিল। এসব সে-ও নিজের মনের মধ্যে অস্পষ্ট ভাবে অহুভব করিয়াছে, অপরের সঙ্গে নিজের এ পার্থক্য মাঝে মাঝে তাহার কাছে ধরা পড়িলেও সে নিজের সম্বন্ধে আদৌ সচেতন নয় বলিয়া এ জিনিসটা বুঝিতে পারিত না। তাহা ছাড়া অপুর প্রকৃতি আরও শান্ত, উগ্রতাশূন্ত ও উদার,–পরের তীব্র সমালোচনা ও আক্রমণের ধাতই নাই তাহার একেবারে –কিন্তু তাহার একটা মহৎ দোষ এই যে, নিজের বিষয়ে কথা একবার পাড়িলে সে আর ছাড়িতে চায় না—অপরেও যে নিজেদের সম্বন্ধে বলিতে ইচ্ছা করিতে পারে, তরুণ বয়সের অনাবিল আত্মম্ভরিতা ও আত্মপ্রত্যয় সে বিষয়ে তাহাকে অন্ধ করিয়া রাখে । সুতরাং সে নিজের বিষয়ে একটানা কথা বলিয়া যায়—নিজের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, নিজের ভালমন্দ লাগা, নিজের পড়াশুনা । নিজের কোন দুঃখদুর্দশার কথা বলে না, কোন ব্যথা-বেদনার কথা তোলে না—জলের উপরকার দাগের মত সে-সব কথা তাহার মনে মোটে স্থান পায় না—আনকোরা তাজা নবীন চোখের দৃষ্টি শুধুই সন্মুখের দিকে, সম্মুখের বহুদূর দিক্‌চক্রবাল রেখারও ওপারে—আনন্দ ও আশায় ভরা এক অপূর্ব রাজ্যের দিকে। সন্ধ্যার পরে বাসায় ফিরিয়া চিম্নি-ভাঙা পুরনো হিঙ্কসের লণ্ঠনটা জালিয়া সে পকেট হইতে অনিলের চিঠিখানা বাহির করিয়া আবার-পড়িতে বসিলা আমায় যে ভাল বলে, সে আমার পরম বন্ধু, আমার মহৎ উপকার করে, আমার আত্মপ্রত্যয়কে স্বপ্রতিষ্ঠিত হইতে সাহায্য করে, আমার মনের গভীর গোপন কোনও লুকানো রত্নকে দিনের আলোর মুখ দেখাইতে সাহস দেয় । পড়িতে পড়িতে পাশের বিছানার দিকে চাৰিয়া মনে পড়ে—আজ আবার তাহার ঘরের