পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত beషి পরে ফুটপাথের ধারে দাড়াইয়া একটুখানি ভাবিল, কালীঘাটে মাসীর বাড়ি খাওয়ার কথা আছে, এখন যাইবে কিনা। একখানা বই কিনিবার জন্য একবার কলেজ স্ট্রীটেও রাওয়া দরকার। কোথায় আগে যায় । অপূর্ব একমাত্র ছেলে, যার কথা তার সব সময় মনে হয়। যে কোনরূপে হউক অপূর্বকে সে নিশ্চয়ই বিদেশ দেখাইবে। তলপেটে অনেকক্ষণ হইতে একটা কী বেদন বোধ হইতেছিল, এইবার যেন একটু বাড়িয়াছে, হাটিয়া চৌরঙ্গীর মোড় পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, সেটা আর না যাওয়াই ভাল । সম্মুখেই ডালহাউলি স্কোয়ারের ট্রাম, সে ভাবিল—পরেরটাতে যাব, বেজায় ভিড়, তভক্ষণ বরং চিঠিখানা ডাকে ফেলে আসি। নিকটেই লাল রংয়ের গোল ডাকবাক্স ফুটপাথের ধারে, ডাক বাক্সটার গা ঘেষিয়া একজন মুসলমান ফেরিওয়ালা পাক কাচকলা বিক্ৰী করিতেছে, তাহার বাজরায় পা না লাগে এই জন্ত এক পারে ভর করিয়া অন্ত পা-খানা একটু অস্বাভাবিক রকমে পিছনে বাকাভাবে পাতিয়া সে সবে চিঠিখান ডাকবাক্সের মুখে ছাড়িয়া দিয়াছে—এমন সময় হঠাৎ পিছন হইতে যেন কে তীক্ষ বর্শ দিয়া তাহার দেহটা এফোড়-ওফোড় করিয়া দিল, এক নিমেষে, অনিল সেটাতে হাত দিয়া সামলাইতেও যেন অবকাশ পাইল না।“হঠাৎ যেন পায়ের তলা হইতে মাটিটা সরিয়া গেল চোখে অন্ধকার—কাচকলার বাজরার কানাট মাথায় লাগিতেই মাথাটায় একটা বেদন—মুসলমানটি কি বলিয়া উঠিল—হৈ হৈ, বহু লোক—কি হয়েছে মশায় ?--কি হ’ল মশায় ?--সরো সরেী—বাতাস করো বরফ নিয়ে এলো...এই যে আমার রুমাল নিন না. অনিলের দু'টি মাত্র কথা শুধু মনে ছিল—একবার সে অতিকষ্টে গোঙাইয়া গোঙাইয়া বলিল—রি—রিপন কলেজ-অপূর্ব রায়—রিপন— আর মনে ছিল সামনের একটা সাইন বোড-গনেশচন্দ্র দী এণ্ড কোং—কারবাইডের মশলা, তারপরেই সেই তীক্ষ বর্শাটা পুনরায় কে যেন সজোরে তলপেটে ঢুকাইয়া দিল— সঙ্গে সঙ্গে সব অন্ধকার— কতক্ষণ পরে সে জানে না, তাহার জ্ঞান হইল। একটা বাক্স বা ঘরের মধ্যে সে শুইয়া আছে, ঘরটা বেজায় দুলিতেছে—পেটে ভয়ানক যন্ত্রণা—কাহারা কি বলিতেছে, অনেক মোটরগাড়ির ভেপুর শব্দ–আবার ধোয়া ধোয়া. পুনরায় যখন অনিলের জ্ঞান হইল, সে চোখ মেলিয়! চাহিয়া দেখিল একটা বড় সাদা দেওয়ালের পাশে একখানা খাটে সে শুইরা আছে। পাশে তাহার বাবা ও ছোট কাক৷ বসিয়া, আরও তিনজন অপরিচিত লোক। নাসের পোশাক-পরা দু'জন মেম। এটা হাসপাতাল ? কোন হাসপাতাল ? কি হইয়াছে তাহার ?--তলপেটের যন্ত্রণ তখনও সমান, শরীর ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে, সারা দেহ যেন অবশ। পরদিন বেলা দশটার সময় অপু গেল। সে-ই কাল খবর পাইরা তখনি চুটিয়া শিয়ালদহের মোড়ে গিয়াছিল। সঙ্গে ছিল সত্যেন ও চার-পাঁচজন ছেলে। টেলিফোনে অ্যাম্বুলেন্স