পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

»ቖ8 বিভূতি-রচনাবলী অপু অবসর খুজিতেছিল, এই সময় তাহার মনে হইল এ-বিষয়ে সে কিছু কথা বলিতে পারে। সে দু একবার চেষ্টা করিয়া সাহস সঞ্চয় করিয়া কতকটা আনাড়ী, কতকটা মীরার মত আৱক্তমুখে বলিল—দেখুন মাপ করবেন, আমি আপনার মতে ঠিক মত দিতে পারি নে— দেহটাকে এঞ্জিনের সঙ্গে তুলনা করুন ক্ষতি নেই, কিন্তু যদি বলেন দেহ ছাড়া আর কিছু cनहे ঘরের সকলেই তাহার দিকে যে কতকটা বিস্ময়ে, কতকটা কৌতুকের সহিত চাহিতেছে, সেটুকু সে বুঝিতে পারিল—তাহাতে সে আরও অভিভূত হইয়া পড়িল—সঙ্গে সঙ্গে সেটুকু চাপিবার চেষ্টায় আরও মরীয়া হইয়া উঠিল । একজন বাধা দিয়া বলিল—মশায় কি করেন, জানতে পারি কি ? —আমি এবার আই-এ দেবো। পাসনে চশম-পরা যে যুবকটি এঞ্জিনের কথা তুলিয়াছিল, সে বলিল,—ইউনিভার্সিটির আরও দু-ব্লাস পড়ে এ তর্কগুলো করলে ভাল হয় না ? সে এমন অতিরিক্ত শান্তভাবে কথাগুলি বলিল যে, ঘরমুদ্ধ লোক হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। অপুর মুখ দাঁড়িমের মত লাল হইয়া উঠিল। যদি সে পূর্ব হইতেই ধারণা করিয়া না লইত যে, সে এ-সভার ক্ষুদ্ৰাদপি ক্ষুদ্র এবং উহার দয়া করিয়া তাহার এখানে উপস্থিতি সহ করিতেছে—তাহা হইলে এমন উগ্র ও অভদ্রভাবের প্রত্যুত্তরে হয়ত তাহার রাগ হইত—কিন্তু সে তো কোনও কিছুতেই এদের সমকক্ষ নয় – রাগ করিবার মত ভরসা সে নিজের মধ্যে খুজিয়া পাইল না। তার অত্যন্ত লজ্জা হইল—এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটা ঢাকিবার জন্য সে আরও মরীয়ার সুরে বলিল—ইউনিভার্সিটির ক্লাসে না পড়লে যে কিছু জানা যায় না একথা আমি বিশ্বাস করি নে—আমি একথা বলতে পারি কোনও ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র যে-কোনও কলেজের হিস্ট্রিতে কি ইংলিশ পেইটিতে—কিংবা জেনারেল নলেজে পারবে না আমার সঙ্গে । নিতান্ত অপটু ধরণের কথা—সকলে আরও একদফা হাসিয়া উঠিল। তারপর তাহারা নিজেদের মধ্যে অন্ত কথাবার্তায় প্রবৃত্ত হইল। অপু আধঘণ্টা থাকিলেও তাহার অস্তিত্বই যেন সকলে ভুলিয়া গেল। উঠিবার সময় তাহারা নিজেদের মধ্যে করমর্দন ও পরস্পরের নিকট বিদায় গ্রহণ করিল, তাহার দিকে কেহ ফিরিয়াও চাহিল না। যেভাবে সকলে তাঁহাকে উড়াইয়া দিল, বা মানুষের মধ্যে গণ্য করিল না, তাহাতে সত্যই অপু অপমান ও লজ্জায় অভিভূত হইয়া পড়িল। তাহার পাশ কাটাইয়া সকলে চলিয়া গেল— কেহ একটা প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করিল না, তাহার সম্বন্ধে কেহ কোন কৌতুহলও দেখাইল না। অপু মনে মনে ভাবিল—বেশ, না বলুক কথা—আমি কি জানি ন-জানি, তার খবর ওরা কি জানে ? সে জানত অনিল... সে চলিয়া যাইতেছে, এমন সময় লীলা আসিয়া তাহাকে নিজে বাড়ির মধ্যে লইয়া গেল। বলিল,—ম, অপূর্ববাবু না খেয়েই চুপি চুপি পালাচ্ছিলেন!