পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১৩৯ ইহার দিন সাতেক পর অপু সকালে ঘুম ডাঙিয়া উঠিয়া ঘরের দোরে কাছার ধাক্কার শব্দ পাইব, দোর খুলিয়া দেখিল—মুসলমান দালালটি হাসিমুখে দাড়াইয়া। —এসো, এসো আবছল, তারপর খবর কি ? —আদাব বাবু, চলুন, ঘরের মধ্যে বলি। এ-ঘরে আপনি একলা থাকেন, না আর কেউ— ও—বেশ ঘর তো বাৰু! —এসে বসে । চা খাবে ? চা-পানের পর আবদুল আসিবার উদ্দেশু বলিল। বারাকপুরে একটা বড় বয়লারের সন্ধান পাওয়া গিয়াছে, ঠিক সেই ধরণের বয়লারেরই আবার এদিকে একটা খরিদ্ধার জুটিয়া গিয়াছে, কাজটা লাগাইতে পারিলে তিনশো টাকার কম নয়—একটা বড় দাও। কিন্তু মুশকিল দাড়াইয়াছে এই যে, এখনই বারাকপুরে গিয়া বয়লারটি দেখিয়া আসা দরকার এবং কিছু বায়না দিবারও প্রয়োজন আছে—অথচ তাহার হাতে একটা পয়সাও নাই। এখন কি করা ? অপু বলিল—খন্ধের মাল ইন্‌স্পেক্শনে যাবে না ? —আগে আমরা দেখি, তবে তো খদেরকে নিয়ে যাব ?—দেড় পাসেণ্ট ক'রে ধরলেও সাড়ে চারশো টাকা থাকবে আমাদের—খদের হাতের মুঠোয় রয়েছে—আপনি নির্ভাবনার থাকুন—এখন টাকার কি করি ? অপু পূর্বদিন টুইশানির টাকা পাইয়াছিল,বলিল—কত টাকার দরকার? আমি তো ছেলেপড়ানোর মাইনে পেয়েছি—কত তোমার লাগবে বলো । হিসাবপত্র করিয়া আট টাকা পড়িবে দেখা গেল। ঠিক হইল—আবদুল এবেলা বয়লার দেখিয়া আসিয়া ওবেলা বাজারে অপুকে সব খবর দিবে। অপু বাক্স খুলিয়া টাকা অনিয়া আবদুলের হাতে দিল । বৈকালে সে পাটের এক্সচেঞ্জের বারানাতে বেঙ্গা পাঁচটা পর্যন্ত আগ্রহের সহিত আবন্ধুলের আগমন প্রতীক্ষা করিল। আবদুল সেদিন আসিল না, পরদিনও তাহার দেখা নাই। ক্রমে একে একে সাত-আটদিন কাটিয়া গেল—কোথায় আবদুল ? সারা বাজার ও রাজা উডম্যাও স্ট্রীটের লোহার দোকান আগাগোড়া খুজিয়াও তাহার সন্ধান মিলিল না। ক্লাইভ স্ট্রীটের একজন দোকানদার শুনিয়া বলিল—কত টাকা নিয়েছে আপনার মশাই! আবদুল তো ? মশাই জোচ্চোরের ধাড়ী—আর টাকা পেয়েছেন, টাকা নিয়ে সে দেশে পালিয়েছে— আপনিও যেমন -- প্রথমে সে কথাটা বিশ্বাস করিল না। আবদুল সে রকম মানুষ নয়, তাহা ছাড়া এত লোক থাকিতে তাহকে কেন ঠকাইতে যাইবে ? কিন্তু এ ধারণা বেশীদিন টিকিল না। ক্রমে জানা গেল আবহুল দেশে যাইবে বলিয়া যাহার কাছে সামান্ত কিছু পাওনা ছিল, সব আদায় করিয়া লইয়া গিয়াছে দিন-সাতেক আগে। কাটাপেরেকের দোকানের বুদ্ধ বিশ্বাস মহাশয় বলিলেম-আশ্চয্যি কথা মশাই, সবাই জানে