পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত &రి গেল, অনেক মেয়ে তো ইতিপূর্বে তাঁহার সঙ্গে কথা বলিয়াছে, এ রকম তো কখনও হয় नोहे ?... দক্ষিণের জানাল দিয়া মিঠা হাওয়া বহিতেছিল, চাপাফুলের মুগন্ধে ঘরের বাতাস ভরপুর। অপু বলিল—রাত দুটে বজে, শোবে না ? ইয়ে—এখানেই তো শোবে ? মা ও দিদির সঙ্গে ভিন্ন কখনও অন্ত কোনও মেয়ের সঙ্গে এক বিছানায় সে শোয় নাই, এক একঘরে এতবড় অনাত্মীয়, নিঃসম্পৰ্কীয় মেয়ের পাশে এক বিছানায় শোওয়া—সেটা কি ভাল দেখাইবে ? কেমন যেন বাধ বাধ ঠেকিতেছিল। একবার তাহার হাতখানা মেয়েটির গায়ে অসাবধানতাবশত ঠেকিয়া গেল—সঙ্গে সঙ্গে সারা গা শিহরিয়া উঠিল। কৌতুহলে ও ব্যাপারের অভিনবতায় তাহার শরীরের রক্ত যেন টগবগ, করিয়া ফুটিতেছিল—ঘরের উজ্জল আলোয় অপুর সুন্দর মুখ রাঙা ও একটা অস্বাভাবিক দীপ্তিসম্পন্ন দেখাইতেছিল। হঠাৎ সে কিসের টানে পাশ ফিরিয়া মেয়েটির গায়ে ভয়ে ভয়ে হাত তুলিয়া দিল। বলিল —সেদিন যখন আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হ’ল, তুমি কি ভেবেছিলে ? মেয়েটি মৃদু হাসিয়া তাহার হাতখান আস্তে আস্তে সরাইয়া দিয়া বলিল—আপনি কি ভেবেছিলেন আগে বলুন ...সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের মুঠাম, পুপপেলব হাতখানি বাতির আলোয় তুলিয়া ধরিয়া হাসিমুখে বলিল—গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে—এই দেখুন কাটা দিয়েছে— কেন বলুন না 7.কথা শেষ করিয়া সে আবার মৃদু হাসিল। এতগুলি কথা একসঙ্গে এই প্রথম ? কি অপূর্ব রোমান্স এ! ইহার অপেক্ষ কোন রোমান্স আছে আর এ জগতে, না চিনিয়া, না বুঝিয়া সে এতদিন কি হিজিবিজি ভাবিয়া বেড়াইয়াছে ! জীবনের জগতের সঙ্গে এ কি অপূর্ব ঘনিষ্ঠ পরিচয় ! ..তাহার মাথার মধ্যে কেমন যেন করিতেছে, মদ খাইলে বোধ হয় এরকম নেশা হয়..ঘরের মধ্যে যেন আর থাকা যায় না-বেজায় গরম। সে বলিল—একটু বাইরের ছাদে বেড়িয়ে আসি, খুব গরম না ? আসছি এখুনি— বৈশাখের জ্যোৎস্ব রাত্রি-রাত্রি বেশী হইলেও বাড়ির লোক এখনও ঘুমায় নাই, বৌভাত কাল এখানে হইবে, নিচে তাহারই উদ্যোগ-আয়োজন চলিতেছে। দালানের পাশে বড় রোয়াকে বিয়েরা কচুর শাক কুটিতেছে, রান্না-কোঠার পিছনে নতুন খড়ের চালা বাধা হইয়াছে সেখানে এত রাত্রে পানতুয়া ভিয়ান হইতেছে—সে ছাদের আলিসার ধারে দাড়াইয়া দেখিল । ছাদে কেহ নাই, দূরের নদীর দিক হইতে একটা বিবৃঝিরে হাওয়া বহিতেছে। দুদিন যে কি ঘটিয়াছে তাহ যেন সে ভাল করিয়া বুঝিতেই পারে নাই—আজ বুঝিয়াছে। কয়েকদিন পূর্বেও সে ছিল সহায়শূন্ত, বন্ধুশুন্ত, গৃহশূন্ত, আত্মীয়শূন্ত জগতে সম্পূর্ণ একাকী, মুখের দিকে চাহিবার ছিল না কেহই। কিন্তু আজ তো তাহা নয়, আজ ওই মেয়েটি যে কোথা হইতে আসিয়া পাশে দাড়াইয়াছে, মনে হইতেছে যেন ও জীবনের পরম বন্ধু । মা এ-সময় কোথায় ?...মায়ের যে বড় সাধ ছিল মনয়াপোতার বাড়িতে শুইরা শুইয়া কত