পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভিন্ন অবস্থায় ও বিভিন্ন পারিপার্থিক পরিবতনে মনের মধ্যে যে অমুভূতি জাগে, আমার এই দৈনন্দিন লিপিতে তাঁহাই প্রতিবিম্বিত হইয়াছে মাত্র। কখনো অন্ধকারে, কখনো জ্যোৎস্না-স্নাত্ত রজনীতে, কখনো সুখে, কখনও দুঃখে, গহন পর্বতারণ্যে বা জনকোলাহলমুখর নগরীতে, বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে বা শান্ত নিঃসঙ্গ—তার মধ্যে মন যেখানে নিজেকে লইয়াই ব্যস্ত ছিল— এই সব রচনার স্বষ্টি সেখানে । পুস্তকে বা পত্রিকার ছাপার অক্ষরে প্রকাশের জন্ত এগুলি লিখিত হয় নাই । সেইজন্ত বহুস্থলে এই রচনাগুলির মধ্যে এমন জিনিস দেখা দিয়াছে যাহা নিতান্তই ব্যক্তিগত। লিপিকৌশলের ইচ্ছাও ইহাদের মূলে ছিল না— হয়তো দ্রুত ধাবমান রেলের গাড়িতে, কিংবা পথচারী পথিকের স্বল্প অবসরে, পথিপাশ্বের কোনো বৃক্ষতলে বা শিলাসনে যে সব রচনার উদ্ভব—লেখকমনের কারিকুরি প্রকাশের অবকাশ সেখানে কোথায় ? যে অবস্থায় যেটি ছিল, অপরিবর্তিত ভাবেই সেগুলি ছাপা হইয়াছে। আমার জীবনে ব্যক্তিগত অনুভূতির অতীত ইতিহাসের দিক হইতে ইহার মূল্য আমার নিজের কাছে যথেষ্ট বেশি । বহু হারানো দিনের মনের ভাব ও বিস্মৃত অনুভূতিরাজি আবার স্পষ্ট হইয়া উঠে। ষে সব অবস্থার মধ্যে কখনো পড়িব না, ক্ষণকালের জন্ত তাহার মধ্যে আবার ডুবিয়া যাই এগুলি পড়িতে পড়িতে,—ব্যক্তিগত সুখদুঃখকে বাণীমূর্তি দেওয়ার ইহার একটি বড় সার্থকতা বলিয়া মনে করি । আমার জীবনের ও জগতের বহির্দেশে যাহারা অবস্থিত—র্তাহারা এগুলি হইতে কি রস পাইবেন আমি জানি না, তবে একথা অনস্বীকার্য যে কৌতুক বা কৌতুহলের মধ্য দিয়া একটি নৈর্ব্যক্তিক আনন্দের অনুভূতি জীবনের সকল দর্শকের পক্ষেই স্বাভাবিক —কারণ ইহার মূলে রহিয়াছে মানবমনের মূলগত ঐক্য। লেখক