পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাকুর $6న খেকে অনেকে করেন। সেটা এই যে, পূর্বের জ্ঞান মনের মধ্যে এসে পৌঁছলে অনেকে জ্ঞানের চোখে পৃথিবীর দিকে চেয়ে বলেন জগৎ মিথ্যা ও মায়াময়। বেদাস্তুের পারিভাষিক ‘মায়া ছাড়াও আর একটা লৌকিক বিশ্বাসের ‘মায়া' আছে, যেটাকে ইংরেজীতে illusion বলে অম্বুবাদ করা চলবে। বেদান্তের মায়া illusion নয়, সে একটা দার্শনিক পরিভাষা মাত্র, তার অর্থ স্বতন্ত্র। কিন্তু ধারা লৌকিক অর্থে ‘মায়া’ শব্দটা গ্রহণ করেন ও অর্থগত তত্ত্বটি মনে মনে বিশ্বাস করে হৃষ্ট হয়ে ওঠেন, তারা তুলে যান মানুষও তো এই অসীম রহস্যভরা স্বষ্টির অন্তর্গত। তার নিজের মধ্যে যে আরও অনেক বেশী সম্ভাব্যঙ্গ, অনেক বেশী আধ্যাত্মিকতা, অনেক বেশী জটিলতা, আরও বেশী রহস্ত। নিজেকে দীন বলে ‘মায়া’ কর্তৃক প্রতারিত দুর্বল জীব মনে করার মধ্যে যে কোনো সত্য নেই, এটা সাহল করে এরা মেনে নিতে পারেন না। নীরদদের বাড়ি কাল সন্ধ্যার সময় বসে একটা প্রবন্ধ পড়ছিলুম একখানা ইংরেজী পত্রিকাতে। এই কথাই শুধু মনে হোল আমরা জীবনে একটা এমন জিনিসপেয়েছি, যা আমাদের এক মূহূর্তে সাংসারিক শাস্তিদ্বম্বের ওপরে এক শাশ্বত আনন্ম-জীবনের স্তরে উঠিয়ে দিতে পারে —অনন্তমূখী চিন্তার ধার প্রবাহিত করে দেয়, এক মুহূর্তে সংসারের রং বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। যখনই জগতের প্রকৃত রূপটির যে অংশটুকু আমরা চোখে দেখতে দেখতে যাই তা সমগ্রতার দিক থেকে আমরা দেখতে পাই, পরিপূর্ণ ভাবে জীবনকে আস্বাদ করবার চেষ্টা করি।--ভূতত্ত্ব, প্রাণীতত্ত্ব, আকাশ, নীহারিকা, নক্ষত্র, অমরত্ব, শিল্প, সৌন্দর্য, পদার্থতত্ত্ব, ফুলফল, গাছপালা, অপরাহ্ল, জ্যোৎস্না, ছোট ছেলেমেয়ে, প্রেম—তখনই বুঝি এই বিশ্বের সকল স্বঃ পদার্থের সঙ্গে একত্ব অনুভব করা ও চারিধারে আত্মাকে প্রসারিত করে দেওয়াই জীবনের বড় আনন। ‘আনন্দ উপনিষদের পারিভাষিক শব্দ, লঘু অর্থে সংসারে চলে এসেচে কিন্তু আনণা কথার প্রকৃত অর্থ উচ্চ জীবনাননা। “আনন্দান্ধেব খলু ইমানি সর্বানি ভূতানি জারস্তে" এখানে আনন্দের কোনো বর্তমান প্রচলিত সাধারণ অর্থ নেই। আজ খুব বেড়ানো হোল। প্রথমে গেলুম বন্ধুর ওখানে। তার মোটরে সে প্রবাসী অফিসে আমার নামিয়ে দিয়ে গেল। সেখান থেকে গেলুম সায়েন্স কলেজে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করবার পর ডা: রায় এলেন। তিনি পিণ্ডিকেটের মিটিংএ গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে খানিকটা কথাবার্তার পর দুজনে বেরিয়ে পড়া গেল, একেবারে সোজা সারকুলার রোড় দিয়ে মোটর হাকিয়ে গ্রিন্সেপ ঘাট। বেশ আকাশের রংটা, ক'দিন বৃষ্টির জালার অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, তাজ আকাশ পরিষ্কার হয়েচে, গঙ্গার ওপারে রামকৃষ্ণপুর ময়দাকলগুলোর ওপরকার আকাশটা তুতে রংএর পশ্চিম আকাশে কিন্তু অন্তস্বর্ষের রং কেটেনি-কেন তা জানি না। ডাঃ রায়ের সঙ্গে বর্তমান কালের তরুণ সাহিত্য সম্বন্ধে বহুক্ষণ আলোচনা হোণ—তার মত