পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর »ፃ© অপূর্ব, সুন্দর, হে স্রষ্ট, হে মহিমময়, নমস্কার, নমস্কার। অন্ত সব জগতও যে দেখতে ইচ্ছে যায়, দেখিও । রোজ বৈকালে কালবৈশাখীর ঝড় ওঠে ; মেঘ হয়, রোজ, রোজ। ঠিক তিনটা বেলা বাজতে না বাজতে মেঘ উঠবে, ঝড়ও উঠবে। আর সমস্ত আমবাগানের তলাগুলো ধাবমান, কৌতুকপর, চীৎকাররত বালক-বালিকাতে ভরে যায়—সল্তে-খাগীতলা, তেঁতুলতলা, খামাচরণদাদাদের বাগানটা, নেকে, পটুলে, বাঁশতলী—সমস্ত বাগানে যাতায়াতের ধুম পড়ে গিয়েচে— সেদিন ঘনমেঘের ছায়ায় জেলেপাড়ার সবাই—ন্ত্রী-পুরুষ বুদ্ধ-বালকের ধামা হাতে আম কুড়চ্চে দেখে আমার চোখে জল এল। জীবনে ও-ই এদের কত আনন্দের, কত সার্থকতার জিনিস “একটা ছেলে বলচে–ভাই—৪ই দোকাটায় মুই যদি না আসতাম, তবে এত আমি পেতাম না!. কাল স{ বেড়ে মেয়ে দেখতে যাবো ।- • সারা গ্রামটাতে বিল্বগাছের ফুলের কি ঘন মুগন্ধ . অশ্বখতলায়, যেখানে সেখানে এত বেলের গাছও আমাদের এখানে আছে ! কাল সাতবেড়ে গ্রামে গিয়ে একটু বেড়িয়ে এলাম। শশী বাড়য্যে মহাশয়ের বাড়ি খুব আহার হল । গ্রামখনিতে সবই চাষা লোকের বাস, ভদ্রলোকের বাস তত নেই, তবে সকলেরই অবস্থা সচ্ছল। মাটির ঘরগুলো সেকেলে ধরনের, কোনো নতুন আলো এখনও ঢোকে নি বলে সেখানের অকৃত্রিম আবহাওয়াট এখনও আছে। ফণি কাকা ও আমি দুজনে দক্ষিণ মাঠের দায়েমের পুকুরের ধার দিয়ে বেশ ছায়ায় ছায়ার বৈকালের দিকে চলে এলাম। নফর কামারের কলাবাগানে কামারবুড়ি কি ফলমূল ও কঁকুড় নিয়ে আসচে দেখলাম। হরিপদ দাদার স্ত্রী বাগানে আম পাড়াচেন । আজকাল রোজ বৈকালেই মেঘ ও ঝড়বৃষ্টি হওয়ার দবন কুঠির মাঠে একদিনও বেড়াতে যাওয়া হয় না। রোজই কালবৈশাখী লেগে আছে। সুন্দর বৈকাল একদিনও পেলাম না । তিনটা বাজতে না বাজতেই রোজ জল আর ঝড় । আজও সকালে নদীতে স্নান করে এলুম। কি সুন্দর যে মনে হয় সকালে স্নানটা করা, স্নিগ্ধ নদীজল, পার্থীর কলকাকলী, মাছের খেলা, নতশীর্ষ গাছপালা, নবেদিত সুর্যদেব। আজ বেড়াতে গেলু বৈকালে কাচিকাটুর পুলটাতে। সকালে অনেকক্ষণ চেয়ার পেতে ওদের বেলতলাটায়, বলেছিলুম, সেখানে কেবল আড়াই হল । বেলা যখন বেশ পড়ে এসেচে তখন গেলাম ঠাকুরমাদের বেলতলাটায়, ফিরচি একজন লোক জটেমারীর কুঠি খুঁজচে, আমাদের বাড়ির পাচিলের কাছে। তারপর নিজে গেলাম বেলেডাঙার পুলটার। একখানা পথের পাঁচালীতে এই আমগাছটির উল্লেখ আছে।