পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাঙ্গুর እማዓ খেজুর ও বিবপুষ্পের অপূর্ব মুরভি মাখানে, নানা ধরনের পাখী-ডাক, মিষ্ট সে বৈকালগুলিতে এমন সব অদ্ভুত ভাব মনে এনে দেয়, দু-একটা পার্থী ধাপে ধাপে সুর উঠিয়ে কোথায় নিয়ে তোলে—কি উদাস, করুণ হয়ে ওঠে তখন চা িকের ছবিটা, বিশেষ করে আমি যখন আমাদের ভিটে ও ঠাকুমাদের বেলতলাটায় গিয়ে খ নকক্ষণ বসেছিলাম, তখন—তার আর বর্ণনা দেওয়া যায় না। আজ জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ, কিন্তু এখনও বিস্ত্ৰপুষ্পের গন্ধ সর্বত্র, পাখীর ডাকের তো কথাই নেই—সে দালিফুল এখনও আছে, তবে পূর্বাপেক্ষ যেন কিছু কম। আমাদের বাগানে এখনও আম আছে, আজ সকলে নদী থেকে আসবার পথে লক্ষ্য করে দেখলাম, এখনও লোক তলায় তলায় আম কুড়-চে । এ সৌন্দর্য ছেড়ে কোথাও নড়তে ইচ্ছে করে না । তা ছাড়া ভেবে দেখলাম, যত স্থানে বেড়িয়েচি, আনন্দ সবচেয়ে বেশী গাঢ় ও উদাস ভাবে আমি পাচি শুধু এই এখানে—কোনো Cosmic thoughts আটকায় না, বরং স্মৃতিপ্রাপ্ত হয়—খুব ভাল করে ফোটে। তবে এই অপূর্ব সৌন্দর্যের মধ্যে দিনরাত ডুবে থাকা যায় বলেই এখানে কোনো শ্রমজনক কাজ করা সম্ভব হয় না দেখলুম। বিকেল হতে না হতে কেবল মন আন্‌চন করে—রাত্রিতে কাজে মন বসে নী—এ যেন Iand of Lotus-eaters, কোনো শ্রমসাধ্য কাজ এখানে সম্ভবপর নয়, সেই জন্তই কলকাতা ফিরতে চাচ্চি দু-একদিনের মধ্যে। আজকাল দিনগুলো একেবারে মেঘমুক্ত, রাত্রি জ্যোৎস্নায় ভরা, সকালগুলি স্নিগ্ধ, পাখীর ডাকে ভরপুর, আর বৈকাল তো ওইরকম স্বৰ্গীয়, অপরূপ, এ পৃথিবীর নয় যেন—তবে আর লিখি কখন ? মনে মনে তুলনা করে দেখলুম এ ধরনের বৈকাল সত্যিই কোথাও দেখি নি—এই তো পাশেই চালকী, ওখানে এরকম বৈকাল হয় না। এত পাখী সেখানে নেই, এ ধরনের এত বেলগাছ নেই, সোদালি ফুল নেই, বনজঙ্গল বড় বেশী, কাজেই অন্ধকার—এমন চাপা আলোটা হয় নী—এ একটা অপূর্ব স্বষ্টি, এতদিন তত লক্ষ্য করি নি, কল লক্ষ্য করে দেখে মনে হল সত্যিই তো এ জিনিস আর কোথাও দেখি নি তো ! দেখবোও না---কেবলমাত্র সেখানে দেখা যাবে যেখানকার অবস্থাগুলি এর পক্ষে অমুকুল। ইসমাইলপুর, আজমাবাদ লাগে না এর কাছে—সে অন্ত ধরনের প্রাচুর্য, বৈচিত্র্য ও কারুকার্য কম—বিপুলত বেশী, প্রখরতা বেশী । ভাগলপুর তো লাগেই না। কতকগুলো বিশেষ ধরনের পাখী, বিশেষ ধরনের বনবিস্তাস, বিশেষ ধরনের গাছপালা থাকাতে এ অঞ্চলেই মাত্র ঠিক এই ধরনের বৈকাল সম্ভব হয়েচে । সোদালি ফুল তার মধ্যে একটা বড় সম্পদ, মাঠে, বনে ওর ঝাড় যখন ফুটে থাকে তখন বনের চেহারা একেবারে বদলে যায়-বনদেবীর সাজির একটা অযত্নচয়িত বনফুলের গুচ্ছের মত নিঃসঙ্গ মনে হয়—এই নিঃসঙ্গ সৌন্দর্য ওকে যে শ্রী ও মহিমা দান করেচে—তা আর কোনে ফুলে দেখলাম না। এই সুন্দর দেশে বাস করেও যারা মানসিক কষ্ট পাচ্ছে, আমার লইমার মত—তাদের সে কষ্ট সম্ভব হচ্চে শুধু অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের জন্ত । মনের সঙ্কুল এদেশটা হারাতে বসেচে— दि. ब्र २-3२