পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖԳԵ বিভূতি-রচনাবলী কল্পনার উদারতা নেই, মুদৃঢ় বিস্তীর্ণতা নেই—দৃষ্টি সেকেলে ও একপেশে, তার ওপর মনের মধ্যে জলে নি জ্ঞানের বাতি। এত করে সইমকে বোঝাই, সে শিক্ষা সইমা নেয় না, নিতে পারবেও না—কতকগুলো মিথ্য সংস্কার ও কাশীরাম দাস এবং কৃত্তিবাস ওঝার প্রচলিত কতকগুলা False Philosophy এদেশের অশিক্ষিতা মেয়েদের মনের সর্বনাশ করেচে। জীবনের সহজ দর্শন এদের নেই, বুড়ে বয়সেও ভাল করে এখনও চোখ ফোটেনি—কি করা যায় এদের জন্তে, সর্বদাই সে কথা ভাবি। শিক্ষা দ্বারা মানুষ নিজেকে নিজে পায়, এইটাই জীবনের বড় লাভ। ভগবানকে পাবার আগে নিজেকে লাভ করা যে আবশ্বক তা এরা ভুলে গিয়ে শুধু ভগবান, ভগবান বলে নীকে র্কাদতে থাকে, নিতান্ত দুর্বল জড়মতির মত। “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য” এ কথা এরা শোনেও নি কোনোদিন । সারা পল্লী-অঞ্চলগুলো এমন হয়ে আছে, এদের দুঃখ দূর করতে গেলে তো জঙ্গল কাটালে হবে না, মশা তাড়ালেও হবে না ( সেটা যে অনাবশ্বক, তা আমি বলচি না ) মাসিক কিছু অর্থ সাহায্যের বন্দোবস্ত করলেও হবে না—এর জন্তে চাই জ্ঞানের আলো—উদার, বিপুল, দীপ্ত জ্ঞানের সার্চ লাইট । আজ অনেকক্ষণ দাসী পিসিমার সঙ্গে গল্প করলুম। সেকালের অনেক কথা হল । ওই সবই আমার জানবার বড় ইচ্ছে। ঠাকুমাদের চণ্ডীমণ্ডপের ডিটাতে দুর্গোৎসব হত, বড় উঠোন ছিল—আল্লাপিসি দুবেলা গোবর দিতেন, খুব লোকজন থেত—নারকেল গাছের পাশে ওই যে মুড়ি গলিটা ওইটা ছিল খিড়কির দেীর—মেটে পাচিল ছিল ওদিকটা । গোলক চাটুয্যে ছিলেন বাবার মামাতে ভাই—পিসিমার মা ছিলেন ব্রজ চাটুয্যের পিসি। রাখালী পিসিমা ছিলেন চন্দ্র চাটুয্যের মেয়ে। প্রসঙ্গত বলা যাক যে আজই রাখালী পিসিমার মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেল। ষাবো যাবো করে আর ঘটে উঠল না । পিসিমার শ্বশুরবাড়ি ছিল চৌবেড়ে। নিবারণ রাখালী পিসিমার ভাই, ডারি মুন্দর দেখতে ছিল—কলেরাতে মারা যায় আঠারো বছর বয়সে। সইমাদের বাড়িতে আসার সময় ওই পথটাতে প্রকাও এক বকুল গাছ নাকি ছিল—তার তলায় অনেক লোক বসতো। হরি ঠাকুরদাদা তার মাকে খেতে দিতেন না, মায়ের সঙ্গে ভিন্ন ছিলেন, তার দেওর গোসাই-বাড়ি ঠাকুর পুজো করে দু-পাচ টাকা যা জমাতো, তাই দিয়ে দরিদ্র বৃদ্ধাকে ধান কিনে দিরে যেতো। বৈকালে নলে জেলের নৌকাতে বেড়াতে গেলুম, মোল্লাহাটির দিকে । ছটার সময় আমাদের ঘাট থেকে নৌকাখানা ছাড়া হল। নদীর দুধারে অপরূপ শোভা, কোথাও বাবলা গাছ ফুলের ভারে নত হয়ে নদীর ধারে ঝুকে আছে, দুধারে ঘাস-ভরা নির্জন মাঠ, ঝোপেঝাড়ে ফুল ফুটে আছে, গাঙ, শালিকের দল কিচ কিচ, করচে, বা ধারে ক্রমাগত জলের ধারে ধারে নলবন, ওকৃড়া ও বন্তেবুড়োর গাছ—মাঝে-মাঝে চাষীদের পটোল ক্ষেত, বেলেডাঙার ঘোষেরা যে নতুন ক্ষেতটাতে পটােল করেচে, তাতে টোকা মাথায় উত্তরের মজুরের নিড়েন দিচ্চে, ওদিকে কুমড়ার টুে-গলু সরু ঘাসের জমি জলের কিনারা দুয়ে আছে, গরু