পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর >bro... তরুণ সাহিত্য সম্বন্ধে কথাবার্তা হল। ভদ্রলোক প্রকৃত কবি, সাহিত্যই দেখলুম ওঁর প্রাণ, কবিতা পড়তে বসে যখন ছেলেমেয়েরা তার কোল থেকে টানাটানি করে রসগোল্লা খেতে লাগল—তখন সে কি দৃশুই হল! বেরিয়ে আমি আর মোহিতবাবু কেওটায় প্রসন্ন গুরুমশায়ের পাঠশালায় খুঁজতে খুঁজতে গেলুম। সে জায়গাটা এখন একটা পোড়ে ভিটে ও জঙ্গল—কোণের সে জামরুল গাছটা এখনও আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে জামরুল গাছটা চেন যাচ্ছিল না—মোহিতবাবু কাছে গিয়ে বললেন—ই্যা, এটা জামরুল গাছই বটে। জামরুল পেকে আছে । তারপর রাখাল চক্রবর্তীর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলুম। পুলিন তার ছেলে । ছেলেবেলায় আমরা এক সঙ্গে বিপিন মাস্টারের পাঠশালায় পড়েচি—এখন ও হটুপা লম্বা, কালে গোপদাড়িওয়ালা মানুষ। ওর সঙ্গে কথা বললুম প্রায় ত্রিশ বছর পরে। শেষ কবে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম কে জানে ?. রাখাল চক্রবর্তীর বাড়ির ভিতরের রোয়াক দিয়ে ওদের রান্নাঘরের রোয়াকে বসে মাসিমার সঙ্গে কথা বললুম। শেষ কবে কথা বলেছিলাম, কবে ওদের রোয়াকে পা দিয়েছিলাম, হয়তো তখন আমরা কেওটাতে ছিলাম--তারপর হয়তো শীতলের মায়ের গল্পবল, কি আতুরীর কাছে ধাম-কুলো বেচার ঘটনাটা—যা আমার কেওটা সম্পর্কে মনে আছে, ঘটেছিল। তারপরে এক বিরাট আনন্দ, আলাপ, রহস্ত, উল্লাস, দুঃখ, হর্ষ, শোক, আলোক-পূর্ণ—বিরাট জীবন কেটেচে–পটপটি তলার মেলায়, বকুলতলার দিনগুলোতে, পুব-মুখে যাওয়ায়, ইছামতীর ধারের সে অপূর্ব শৈশবের আনন্দময় দিনগুলি— সেই কতদিন স্কুল থেকে সপ্তাহ পরে ফিরে এসে মায়ের হাতে চৈত্র মাসের দিনে বেলের পানা খাওয়া, তারপর স্কুল কলেজ, বাইরের জীবনে যা কিছু ঘটেচে সবই ওর পরে । কলিকার দিনটিতে আবার এতকাল পরে পা দিলাম রাখাল চক্রবর্তীর বাড়ির ভিতরকার রোয়াকে বা পুলিনের সঙ্গে কথা কইলাম। জীবনের অপূর্বত্ব এই সব মুহূর্তে কি অদ্ভুত, অপরূপ ভাবেই ধরা পড়ে যায়। করুণা মামার বাবা যোগীনবাবু জানলা খুলে কথা কইলেন । তিনি আমাকে খুব চেনেন দেখলাম । 绫 রাত আটটার বসে হুগলী ঘাট এলাম। খুব পরিষ্কার আকাশ, খুব নক্ষত্র উঠেচে। রাত এগারেটস্থ কলকাত ক্ষের গেল । সেই সকাল ছাঁটায় বেরিয়ে কোথায় বড়-জাগুলে, মরিচ, দুধারের ঘন জঙ্গল, কাচরাপাড়া বাজার, বাঁশের পুল, হালিসহরের খেয়াঘাট, কেওটা, হুগলী ঘাট, নৈহাটী—সব বেড়িয়ে ঘুরে আবার কলকাতা ফিরলাম সাড়ে এগারোটা রাত্রে। মোটর বাস ছিল বলেই একদিনে এত ঘোরাঘুরি, এমন সব অপূর্ব অভিজ্ঞতা সম্ভব হল। রাখাল চক্রবর্তীর বাড়ির পৈটার বসে মোহিতবাবু 'পথের পাচালী সন্ধন্ধে অনেক কথা বললেন। কেওটা সেই অশ্বথ, গাছটার কাছে রাত আটটায়ু সময় দাড়িয়ে ভবিষ্কং সাহিত্য