পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌbrb" বিভূতি-রচনাবলী ওখান থেকে তিনটের সময় বেরিয়ে দক্ষিণবাবুর বাড়ি, সেখানে অনেকক্ষণ গল্পগুজবের পর জলযোগ হল। চা-পানের পর সেখান থেকে বার হয়ে নিকটেই মহিম হালদার স্ট্রীটে রবি-বাসরের অধিবেশনে ধোগ দিলাম—সেখানে বেল পাচটা থেকে রাত নটা । অনেক রাত্রে ট্রামে বাসায় ফিরলাম । আজকাল সেই মধুর দিনগুলি হারিয়ে গেছে—বহুদিন দেশে যাই নি—আজ বিকেলে স্কুলবাড়ির ছাদ থেকে বহুদূরের দিকে চেয়ে কতকাল আগের কথা মনে হচ্চিল—মনে হচ্চিল অনেককাল আগের সেই মাকাল ফল, পটুপটি গাছের সময়টা এই—কত নতুন লতাপাত৷ গজিয়েচে–ভাদ্র দুপুরের খররৌদ্রে জানালার ধারে বসে সে-সব মধুর জীবন-যাত্রার দিনগুলি —কত মুখদুঃখ-ভরা শৈশবের সে জগৎটা।.. কোথায় কতদূরে যে চলে গিয়েচে । আজকাল সময় পাই না, স্কুলের পরই পর পর দুটো ছেলে পড়ানে—একটুখানি ভাববার সময় পাই নে, দেখবার সময় পাই নে, তবু যতটুকু সময় পাই—দুর্ভিক্ষের ক্ষুধায় ই করে যেন আকাশটার দিকে চেয়ে একটুখানি অপরাতুকে স্কুলের তেতলার ছাদটা থেকে দেখি–আবার সেই ‘জীবন-সন্ধ্যা’ ও ‘মাধবী কঙ্কনের দিনগুলি আগতপ্রায় । এখন দেশে পাটের আঁটি কাচবে, খুব পাকাটি পড়ে থাকবে । সেই জেলেখা, রঙমহাল শিসমহাল, শিবাজীর দিনগুলি আরম্ভ হবে । এই যে অভাব, না দেখতে পাওয়া,—আমাদের মনে হয় এই ভাল। এতে মনের তেজ খুব বাড়ে, দৃষ্টির intensity আরও বেশী হয় এটা বেশ বুঝি। একটা কথা এই মাত্র ভাবছিলাম, রামায়ণ মহাভারতের যুগের পূর্বে ভারতের বালকের, বৃদ্ধের কি ভাবতো–তখন জীবনের ভাব-সম্পদ ছিল দীন—সীতার অশ্রুজল তখন ছিল লোকের অজ্ঞাত, ভীষ্মের সত্যনিষ্ঠ, শ্ৰীকৃষ্ণের লীলা, এ সব তো জানতো না । বুদ্ধের কথা বাদ দিলাম, অশোক, চৈতন্ত, মোগল বাদশাহ গণ–এই সমস্ত Tragic possibility, ভবিষ্যতের গর্ভে ছিল লীন—তবে তখনকার লোকে কি ভাবতো,—কবিদের, ভাবুকের, গায়কের, চিত্রকরের উপজীব্য ছিল কী ? আর পাঁচশত বছরের সম্ভাব্যতার কথা মনে উঠচে । আরও কত Tragedyর বিষয়, ভাবুকতার ইতিহাস ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে এর মধ্যে। সেটা এখনই গড়ে উঠচে, কিন্তু আমরা তার সমস্তটা এক সঙ্গে দেখতে পাচ্চি নে । এই ইংরাজ চলে যাবে একদিন—এই সব স্বাধীনতা সংগ্রাম, এই গান্ধী, নেহরু, চিত্তরঞ্জন, এই নারী-জাগরণ, কাথির এই অশ্রুতীর্থ—ইতিহাসে এসব কথা নব নব ভাবের জন্মদাত্রী হবে। এসব ঘটনা জাতির মনের মহাফেজখানায় অক্ষয় আসনের প্রতিষ্ঠা করবে। কাল সারা দিনটা খড় ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটলো—প্রবাসী আপিলে একটা কাজ ছিল। ঠিক বেলা বারোটার সময় সেখান থেকে বার হয়ে গেলাম প্রেসিডেন্সী কলেজে রবীক্সপরিষদে। নীহারধাৰু বললেন, “পথের পাঁচালীকে আমি তরুণ সাহিত্যের মধ্যে উচ্চ আসন দিই। প্রমণবাৰু আবার বইখানির কথা অনেক ছাত্রদের বলছিলেন। প্রতুল গুপ্ত বলে