পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাঞ্চুর నరీ আজকার দিনটি বেশ ভাল কাটল। সকালের দিকে খুব মেঘ ছিল, কিন্তু দুপুরের পরে খুব রৌদ্র উঠল—তখন বেরিয়ে পড়া গেল—প্রবাসী আপিলে গিয়ে দেখি অশোকবাবু ও সজনী দাস বসে। চা পানের পরই সজনীবাবু গিয়ে গাড়ি করে সুনীতিবাবুকে উঠিয়ে নিয়ে এল— পরে আমরা রওনা হলাম আমাদের গ্রামে। সজনীবাবু, অশোকবাবু, সুনীতিবাবু আর আমি । যশোর রোডে এসে ব্যাটারির তারটা জলে উঠে একটা অগ্নিকাণ্ড হত, কিন্তু সুনীতিবাবুর কুঁজ্যের জল দিয়ে সেটাকে থামানো গেল । তারপরই খুব জোরে মোটর ছুটল—পথে মাঝে মাঝে রোদ, মাঝে মাঝে ছায়া—রোদই বেশি । আজ রবিবার, সাহেবরা কলকাতা থেকে বেড়াতে বেরিয়ে এক এক গাছতলায় মোটর রেখে ছায়ায় শুয়ে আছে। তারপর পৌছে গেলাম জোড়া-বটতলায়। ওখানেই মোটরখানা রইল, কারণ দিনকয়েক আগে আমাদের গ্রামের দিকে খুব বৃষ্টি হয়েছিল, পথে এখনও একটু একটু কাদা নেমে কঁচাপথটা বেয়ে বরাবর চললুম, মুনীতিবাবু কাচা কোসো কুল ও সেয়াকুল খেতে খেতে চললেন, অশোকবাবু ছড়ি কাটবার কথা বলতেই সজনীবাবু চটি ফেলে ছুটল গড়িতে ছুরি আনতে । গ্রামে ঢুকবার আগে এ-ফুলের ও-ফুলের নাম সব বলে দিলাম—কাঠালতলায় হেলা গুড়িতে গিয়ে সবাই বসল। তারপরে সইমার বাড়ি গিয়ে কিছু মুড়ির ব্যবস্থা করে একটা আসন পেতে সবাইকে বসালাম । সেখানে খাওয়া ও গল্পগুজবের পরে আমাদের পোড়ো ভিটেট দেখে রান্নাঘরের পোতা দিয়ে সবাই নেমে ঘন ছায়ায় ছায়ায় এলাম সলতেখাগী আমগাছের তলায়—সেই ময়না-কাটা গাছ থেকে ছড়ি কেটে নিলে অশোকবাৰু ও সজনীবাবু—পরে তেঁতুলতলীর তলার বনের মধ্যে দেখা গেল একটা খুব বড় ও ভাল ময়ন+ কাটা গাছ—সেখান থেকে আর একটা ছড়ি কাটা হল । তারপর প্রায় বেলা গেল দেখে আমি খুব তাড়াতাড়ি করলাম—ওদের বন থেকে টেনে বার করে নিয়ে গেলুম কুঠিটার। ছেলেবেলায় গ্রামের জামাইদের ডেকে নিয়ে কুঠি দেখাতুম। তারপর সে কাজটা অনেকদিন বন্ধ ছিল—বহুকাল বন্ধ ছিল । শেষে কাকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তা তো মনে হয় না— বহুকাল পরে বাল্যের সে কুঠি দেখানো পুনরাবৃত্তিটা করলুম। তখন কুঠিটা আমার কাছে খুব গর্ব ও বিস্ময়ের বস্তু ছিল—তাই যে কেউ নতুন লোক আসতো, তাকেই নিয়ে ছুটতাম কুঠি দেখাতে। আজ বহুদিন পরে সজনীবাবু, মুনীতিবাবু ও অশোকবাবুকে নিয়ে গেলাম সেখানে। কুঠিতে কিছু নেই। আজকাল এত জঙ্গল হয়ে পড়েচে যে আমি নিজেই প্রথমটা ঠিক করতে পারলুম না কুঠিটা কোন জায়গায় । তারপর মাঠ দিয়ে খানিকটা ছুটতে ছুটতে গেলাম। রাস্তায় পড়ে কাচিকাটার পুলে— এই কাত্তিকমাসেও একটা গাছে একগাছ সোদালি ফুল দেখে বিস্মিত হলাম। সেইখানে ঝোপটি কি অন্ধকারই হয়েচে ! মুনীতিবাবু চেয়ে চেয়ে দেখলেন—সবাইকে ডেকে দেখালেন —আমার বেশ মনে হচ্ছিল আমার পরিচিত সলতেথাগী তলায় যেখানে আমিই আজকাল কম যাই সেখানে—আমাদের ভিটেতে—সম্পূর্ণ কলকাতার মাছুয মুনীত্তিবাবু, অশোকবার, वि. ब्र २-४७ \