পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&》br বিভূতি-রচনাবলী পাহাড়ী নদী বয়ে চলেচে। কতকগুলি লোক একটা কাঠের পুলের ওপর খড় বিছিয়ে দিচ্চে। ণের বললে, পাটোয়ারীর ছেলে এপথে চলে গিয়েচে। পাহাড়ী করবীর দল জলের ধারে ফুটে রয়েচে । শান্ত শাল-পলাশের বনের ছায়া। এখানেই সবাই উড়িয়া বুলি বলচে। এমন ভাল লাগে ! নীল আকাশের তলে অফুরন্ত বীশের জঙ্গল । শাল-পলাশের বনে রোদ ক্রমে হলদে হয়ে আসচে। প্রিণ্ডোল থেকে গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে ৭৮ মাইল পথ হেঁটে দুপুরে বিক্রমখোলে পৌঁছলাম। বিক্রমথোলের গারে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরে উৎকীর্ণ লিপি আবিষ্কৃত হয়েচে—তাই দেখবার জন্তু আমরা এখানে এসেচি। লেখাটা ভারী চমৎকার জায়গায়— একটা Iimestone-clag এর নীচে ছায়াভরা জায়গায় প্রাকৃতিক ছোট একটা গুহা মত— তারই গায়ে লেখাটা। চারিধারের বন যেমন গভীর তেমনি মুনার—পথের মধ্যে জঙ্গলে কত ধরণের গাছ । আমলকী ও হরিতকীর বন—আমরা আমলকী ফল কুডিয়ে খেতে খেতে এলাম। প্রিণ্ডোল গায়ের পাটোয়ারী আমাদের জন্তে মুড়কী ও দুধ নিয়ে এল। উড়িষ্যার এই গভীর জঙ্গলে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের শিলালিপি ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেচে। জায়গাটা অতীব গভীর অরণ্যময়—কি অপূর্ব নীল আকাশ অরণ্যের মাথায়—কি অপূর্ব নিন্তব্ধতা - পাহাডের erag, ভার ছায়ায় আমরা কতক্ষণ বসে রইলাম—ছেড়ে যেতে আর ইচ্ছে করে না—ইচ্ছা হয় না যে আর বেলপাহাড়ে ফিরি। আবার গাড়িতে উঠি । আবার কলকাভীয় যাই । 叠 প্রিণ্ডোলা নামে একটা গা পাহাড়ের পাদদেশে—এইখানা দিয়ে বিক্রমথোল যেতে হয় । আমরা বেলা দশটার সময় এখানে পৌঁছলাম। একটু পরেই পাটোয়ারী গাড়ি করে এল। গায়ের ‘গাউঠিয়া' অর্থাৎ গ্রাম-প্রধানের নাম বিম্বাধর—সে তাড়াতাড়ি আমাদের জন্তে দুধ ও মুড়কী নিয়ে এল খাবার জন্তে। একটু বিশ্রাম করে আমরা বিক্রমখোল রওনা হলাম— দেখাশুনো করে ফিরে আবার গায়েই এলাম। ওবেলাকার নাচের দল নাচ দেখালে। আমরা একটা ফটাে নিলাম। আমাদের কোন অদৃষ্টপূর্বক জীব ভেবে এখানকার লোকের ঝুঁকে পড়েচে—দলে দলে এসে আমাদের চারিপাশে দাড়িয়েচে। প্রমোদবাবু মুখে সাবান মেখে দাড়ি কামাচ্ছে—এর অবাক হয়ে চেয়ে আছে—এ দৃগু আর কখন দেখে নি বোধহয়। ফটোগ্রাফ নেবার সুবিধের জন্ত নাচ হল পথের ওপর—ঝন্‌ঝন করচে রোদ-নাচওয়ালীদের মুখের ওপর বড় রো পড়েচে দেখে আমি পরিমলবাবুকে তাড়াতাড়ি snapটা সেরে নিতে বললুম। নাচ গান শেষ হল। প্রমোদবার, পরিমলবাবু ও কিরণ হেঁটে রওনা হলেন বেলপাহাড়ে। আমার পারে ফোস্কা পড়েচে বলে হাটতে পারা গেল না । গরুর গাড়িতে ওঁদের জিনিসপত্র নিয়ে আমি ঘণ্টাখানেক পরে রওনা হলাম। দেখলাম—আর্বাবর্তের সমতলভূমি বাদে ভারতের সবটাই এই ধরনের ভূমি। B. N. R.-ই দেখ না কেন—সেই খড়গপুর থেকে