পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর ૨૨ જ একটা কথা না লিখে পাচিনে। আমি তো বা দেখি, তাই আমার ভাল লাগে-বিশেষ করে যদি সেখানে বন থাকে। কিন্তু তবুও লিখচি আমি এ পর্যন্ত যত পাহাড় ও অরণ্য দেখেচি–চন্দ্রনাথ, ত্রিকুট, কাটনি অঞ্চলের পাহাড়–ডিগরিয়া ও ননন পাহাড়ের উল্লেখ করাই এখানে হাস্যকর, তবুও উল্লেখ করচি.এইজন্তে যে, এই ডায়েরীতেই কয়েক বছর আগে আমি নন্দন পাহাড়ের মুখ্যাতি করে খুব উচ্ছ্বাসপূর্ণ বর্ণনা লিখেচি—এসব পাহাড় কিন্‌লী ও রামটেকের কাছে স্নান হয়ে যায় সৌন্দর্য ও বিশালতায় । কাল নাগপুর থেকে চলে যাব। আজ রাত্রে নির্জন বাংলোর বারানাতে বসে জ্যোৎস্নাভরা কম্পাউণ্ডের দিকে চেয়ে শরৎচন্দ্র শাস্ত্রীর দক্ষিণাপথ ভ্রমণ পড়চ। সেই পুরনো বইখান, সিদ্ধেশ্বরবাবুদের অফিসে কাজ করবার সময় টেবিলের ড্রয়ারে যেখান লুকনো থাকত। কাজের ফঁাকে ফঁাকে চট করে একবার বার করে নিয়ে পাহাড়, জঙ্গল, দূর দেশের বর্ণনা পড়ে ক্লাস্ত ও রুদ্ধশ্বাস চেতনাকে চাঙ্গা করে নিতুম। এখনও মনে পড়চে সেই ছোট টেবিলট, তার ড্রয়ারটা, ডাইনে কাঠের পার্টিসনটা—সেই রোকড় খতিয়ানের স্তুপ, ফাইলের বোঝা। কাল বৈকালে এক বেড়াতে বার হয়েছিলাম, কারণ সকালের বম্বে মেলে প্রমোদবাবু হাওড়া ফিরলেন। আমি তাকে তুলে দিতে গিয়েছিলাম। একজন হিন্দুস্থানী ভদ্রলোকের সঙ্গে ট্রেনে আলাপ হল, তার বাড়ি খড়গপুর, তিনি মতিকাকাকে চেনেন। বললুম, মতিকাকার কাছে আমার নাম বলবেন । তারপর বৈকালে এক বার হলাম। South Tiger (inp Road দিয়ে পাহাড়ের ওপর উঠে একটা মুক্ত জায়গায় শীকোর ওপর বসলাম । সামনে ধুধু প্রান্তর, দূরে দূরে শৈলশ্রেণী —বায়ে সাতপুর, ডাইনে রামটেকের পাহাড় ও মানসারের ম্যাঙ্গণনিজের পাহাড় অস্পষ্ট দেখা যাচ্চে। একটু পরে স্বর্য ডুবে গেল, পশ্চিম দিগন্তে কত কি রঙ ফুটল । আমার কেবলই মনে আসতে লাগল ঐ শ্লোকটা—প্রস্থিতা দূরপম্বাণং শ্লোকের টুকরোটার নতুন মানে এখানে বসেই যেন খুঁজে পেলাম। ভাবলাম আমার উত্তর-পূব কোণে, আরও অনেক পেছনে কাশী ও বিন্ধ্যাচল, মির্জাপুর ও চুণার পড়ে আছে—পশ্চিম ঘেঁষে প্রাচীন অবস্তী জনপদ - পূর্বে প্রাচীন দক্ষিণ কোশল, সামনের ঐ নীল শৈলমাল—যার অস্পষ্ট সীমারেখা গোধূলির শাস্ত ছায়ায় অস্পষ্ট দেখা যাচ্চে—ঐ হল মহাভারতের কিংবা নৈষধ চরিত্রে সেই ঋক্ষবান পর্বত । এই যেখানে বসে আছি, এখান থেকে পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে অমরাবতীর কাছে পদ্মপুর বলে গ্রামে কবি ভবভূতির জন্মস্থান। এ সব প্রাচীন দিনের স্মৃতি জড়ানো প্রাস্তর, অরণ্য, শৈলমালা দিগন্তহীন মালভূমির গম্ভীর মহিম, এই রকম সন্ধ্যায় নির্জনে বসলেই মনকে একেবারে অভিভূত করে দেয়। পূর্বে চেয়ে দেখি হঠাৎ কখন পূর্ণচন্দ্র উঠে গেছে। তারপর জ্যোৎস্না-শাভিত Tiger Gap Road-এর বনের ধার দিয়ে শহরে ফিরে এলাম। শরতের রাত্রের হাওয়া বস্ত শিউলির স্ববাসে ভারাক্রান্ত ও মধুর। Lawrence Road-এর মোড়ে এসে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম —তিনজন বাঙালী ছোকরার সঙ্গে দেখা—তারা আমার বাংলোর কাছে পৌঁছে দিয়ে গেল।