পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাকুর ২৩৭ আজ বিকেলে সারা ঈশান কোণ জুড়ে কালবৈশাখীর মেঘ বকুল এবং ভয়ানক ঝড় উঠল। হাজারী জেলেনী, জগবন্ধু, কালো, জেলি ওরা আম কুণ্ডতে গে বাগান—কারণ এখনও আম যথেষ্ট আছে, ঝিনুকে গাছে, চারা বাগানে, মাঠের চারায়। তারপর ঘন বর্ষা নামলো—আমি আর কালো বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বর্ষাক্ষাত গছপালা, বটের সারি, উলুর মাঠের মধ্য দিয়ে বেলেডাঙ্গাতে। সেথান থেকে যখন ফিরি, বর্ষ। আরও বেশি, বিদ্যুতের এক একটা শিখা দিক থেকে দিগন্তব্যাপী—মাকাশে কালো কালো মেঘ উড়ে চলেচে—আমার মনে হল আমিও যেন ওদের সঙ্গে চলেচি মহাবোম পার হয়ে চিন্তাতীত কোন মুদুর বিশ্বে—আকাশ মহাকাশে আমার সে গতি—পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন, মুখদুঃখ ঘরগৃহস্থালীর বন্ধনমুক্ত আমার আত্মা, সে পায়ের তলায় সারা পৃথিবীর মোহ মাড়িয়ে চলেচে—মহাব্যোমের অন্ধকার, শূন্ত, মেঘ, ইথার, সমুদ্র ভেদ করে মুক্তপক্ষ গতিতে অমিততেজে চলেচে—দিকৃপাল বৈশ্ৰবণের বিশ্ববিদ্রাবণকারী পৌরুষের বীর্ষে । নদীতে স্বান করতে নেমে সীতার দিয়ে বৃষ্টি মাথায় চলে গেলুম ওপারে মাধবপুরের চরের ওপর বর্ষা দেথতে—পশ্চিম দিকে পিঙ্গল বর্ণের মেঘ হয়েচে, ওপারের বাশবন হওয়ার দুলচে—তারপর আমরা আবার এপারে এলাম-ঠিক সন্ধার সময় বাড়ি এলাম । আজকার সন্ধ্যাটি ঠিক বর্ষসিন্ধ্যা—কিন্তু কেমন যেন নিঃসঙ্গ মনে হচ্চে। যেন আর কেউ থাকলে ভাল হত—কত থাকলেই তো ভাল হত—সব সময় হয় কৈ ? আমার মনে এই যে অমুভূতি—এ অনেক কাল পরে আবার হল। আমি কত নিঃসঙ্গ নির্জন জীবন যাপন করেচি কতকাল ধরে, লোকালয় থেকে কতদূরে। কিন্তু ১৯২৩—১৬ সালের পরে ঠিক এ ধরনের বেদনা-মাখানে নিঃসঙ্গতার অনুভূতি আর কখনো হয় নি। এই মনের অবস্থা আমি জানি, চিনি একে—এ আমার পুরাতন ও পরিচিত মনোভাব, কিন্তু ১৯২৬ সালের পরে ভুলে গিয়েছিলাম একে—আবার সেই ফিরে এল । কাল আবার খুব আনন্দ পেয়েচি। মনের ও ভাবটা কাল আর ছিল না। বিকেলে আমরা কাচিকাটার পুলের পথে অনেকদূর পর্যন্ত বেড়াতে গেলাম। নীল মেঘে সারা আকাশ জুড়ে ছিল—কাল স্বান করে ফিরবার পথে শিমুল গাছটার ওদিকে আউশ ধানের ক্ষেতের ওপরকার নীল আকাশ দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম—অমনি মনের ভাব বিকেলেও হয়েছিল। আরামডাঙ্গার ওপারে সেই খাবরাপোতার দিকের আকাশে একটা নীল পিঙ্গল বর্ণ-স্ত্র, স্বর্য বোধহয় অস্ত যাচ্ছিল, আমরা কিন্তু পেয়ারা গাছটা খুঁজে পাচ্ছিলাম ন-আমি আর কালো কত খুঁজলাম, আরামডাঙ্গার পথে মরগাঙের ধারে সেই পেয়ার গাছটা ৰে কোথায় গেল ! সন্ধ্যার কিছু আগে কুঠির মাঠে একটা ঝোপেষেরা নতুন জায়গা আবিষ্কার করা গেলএদিকটায় কখনো আসি নি—এমন নিভৃত স্থানটা, খুব আনন্দে নদীতে পাতার দিলাম। এবার বারাকপুরে চমৎকার ছুটিটা কাটল। সমস্ত ছুটিটাই তো এখানে রয়োচ। আর