পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল ૨(tt স্ত্রী ঘুম-জড়ানো চক্ষে বিছানার উপর উঠিয়া বলিয়াছে। স্বামীকে দেখিয়া একটু অপ্রতিভের স্বরে বলিল—কখন এলে? তা আমায় একটু ডাকলে না কেন ? কিশোরী বলিল—আর ডেকে কি হবে ? আমার কি আর হাত পা নেই। নিতে জানি নে ? হাঠাৎ তাহার স্ত্রী রাগিয়া উঠিল—নিতে জান তো জেনো। কাল থেকে আমার এখানে আর বনবে না। এ যেন হয়েচে শক্রপুরীর মধ্যে বাস—বাড়িসুদ্ধ লোক আমার পেছনে এমন করে লেগেছে কে শুনতে চাই। না হয় বরং.. কান্নায় ফুলিয়া সে বালিসের উপর মুখ গুজিল । কিশোরী দেখিল স্ত্রী রাত-দুপুরের সময় গায়ে পড়িয়া ঝগড়া করিয়া একটা বিভ্রাট বাধাইয়। তোলে বুঝি। এরকম করিয়া আর সংসার করা চলে না—ভাত ঢাকা ছিল, খুলিয়া লইয়া থাইয়াছে, ইহাতেও যদি স্ত্রী চটিয়া যায় তাহা হইলে আর পারা যায় না ; কিছু না, ও একটা ছল; ঐ সামান্ত স্বত্র ধরিয়া এখনি সে একটা রাম-রাবণের যুদ্ধ বাধাইয়া তুলিবে। কিশোরী বলিল—যা খুশী কালকে কোরে—এখন একটু ঘুমুতে দাও। ঘুমুচ্ছিলে বলেই আর ডাকিনি এই তো অপরাধ ? তা বেশ, কাল থেকে ওঠাবো, চুলের নড় ধরে ওঠাবো। স্বশীলা কথাও বলিল না, মুখও তুলিল না, বালিসে মুখ গুজিয়া পড়িয়া রহিল। পরদিন সকালে উঠিয়া রামতনু মুখুধ্যে শুনিলেন, চৌধুরীর খবর পাঠাইয়াছে কয়েকটি নৃত্তন সাক্ষীর তালিম দিতে হইবে। যাইবার সময় তিনি বলিলেন—ও বউম, একটু সকাল সকাল ভাত দিয়ো, কোটে যেতে হবে। বেলা নয়টার সময় ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন—সুশীলা স্বান করিয়া আসিয়া রৌদ্রে কাপড় মেলিয়া দিতেছে, গৃহিণী মোক্ষদাসুন্দরী রান্নাঘরে বসিয়া রাপিতেছেন। স্বামীকে দেখিয়াই মোক্ষদা চৌকিদার হাকার সুরে বলিতে লাগিলেন-হয় আমি একদিকে বেরিয়ে যাই, না হয় বাপু এর একটা বিহিত করে। সেই সকাল থেকে ঘুরপাক দিয়ে দিয়ে বেড়াচ্ছে, বলছি— ও বউমা, ছুটে ভাত চড়িয়ে দাও, ওগো যা হয় ছুটো-কিছু রাধ—হাতে পায়ে ধরতে কেবল বাকী রেখেছি। কার কথা কে শোনে ?—এই বেলা-দুপুরের সময় রানী এখন এলেন মুশীলা রক হইতেই সমান গলায় উত্তর দিল-মাইনে করা দাগী তো নই, আমি যখন পারব রান্না চড়াবো—সকাল থেকে বসে আছি নাকি ? এত খাটুনি সেরে আবার আটটার মধ্যে ভাত দেবেী—মানুষের তো আর শরীর নয়—যার না চলবে সে নিজে গিয়ে রোধে निक••• এ-কথার উত্তরে মোক্ষদা খুী হাতে রান্নাঘরের দাওয়ায় আসিয়া নটরাঙ্গ শিবের তাণ্ডব নর্তনের একটা আধুনিক সংস্করণ শুরু করিতে যাইতেছিলেন—একটা ঘটনায় তাহ বন্ধ হইয়া গেল । একটা দশ-বারো বৎসরের ছেলে, রংটা বড়ই কালো, ম্যালেরিয়ায় শরীর জীর্ণ শীর্ণ, পরনে