পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল ૨68 তাহার হাতের আঙুলগুলিতে রাক্তপাত করিয়া দিয়াছে। ইরাণী শাহজাদাগণের নজীর না থাকিলেও কিশোর মধ্যে মধ্যে দুরন্ত স্ত্রীর প্রতি এরূপ ঔষধি প্রয়োগ করিত। শেষ-রাত্রে একাদশীর জ্যোৎস্নায় চারিদিক যখন ফুলের পাপড়ির মত সাদা, ভোর রাত্রের বাতাস নেকুফুলের গন্ধে আর পাপিয়ার গানে মাখামাখি, সুশীলা তখন ঘরের দোরের বাহিরে আঁচল পাতিয়া অকাতরে ঘুমাইতেছিল। সকাল হইলে ধে-ধার কাজে মন দিল। মোক্ষদা বলিলেন—বউমা, আজ চৌধুরার শিবতলায় পুজো দিতে যাবে, আমাদের যেতে বলেছে, সকাল-সকাল সেরে নাও। এই চৌধুরীটি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে রামতনু মুখুয্যের প্রতিপালক, ইহারাই গ্রামের জমিদার এবং ইহাদেরই জমি-জমা সংক্রান্ত মকদ্দমার তদ্বির ও সাহায্য করিয়া রামতনু আল্পসংস্থান করিতেন । বেলা দশটার মধ্যে আহারাদি শেষ করিয়া ভাল কাপড় পরিয়া সকলে নৌকায় উঠিল— দুই ঘণ্টার পথ। চৌধুরী-বাড়িতে কলিকাতা হইতে একটি বউ আসিয়াছিল। তাহার স্বামী বড়লোকের ছেলে, এম-এ পাস করিয়া বছর দুই হইল ডেপুটিগরি চাকরি পাইয়াছে। বউটি কলিকাতার মেয়ে, চৌধুরীদের সহিত তাহার স্বামীর কিরূপ সম্পর্ক আছে, এজন্য চৌধুরীগৃহিণী রাসপূর্ণিমার সময় তাহাকে আনাইয়াছিলেন। ইতিপূর্বে সে কখনো পাড়াগায়ে আসে নাই। নৌকার থানিকটা বসিয়া থাকিবার পর বউটি দেখিল, নীলাম্বরী কাপড় পরনে তাঁহারই সমবয়সী আর-একটি বউ নৌকায় উঠিল। নৌকা ছাড়িয়া দিল, নৌকায় সমবয়সী সঙ্গিনী পাইয়া কলিকাতার বউটি খুব সস্তুষ্ট হইলেও প্রথমে আলাপ করিতে বাধ-বাধ ঠেকিতে লাগিল । সঙ্গিনীর কাপড়-চোপড় পরিবার অগোছাল ধরন দেখিয়া বউটি বুঝিয়াছিল তাহার সঙ্গিনী নিতান্ত পাড়াগায়ের মেয়ে, অবস্থাও খুব ভাল নয়। নৌকার ও-ধারে চৌধুরীগৃহিণী মোক্ষদার সহিত সাবিত্রী-ব্ৰত প্রতিষ্ঠার কি আয়োজন করিয়াছেন, তাহারই বিস্তৃত বড়মামুৰী ফৰ্দ আবৃত্তি করিতেছিলেন। নৌকায় কোন পরিচিত মেয়েও নাই, কাজেই বউটি অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। বউটি লেখাপড়া জানিত এবং দেশ-বিদেশের খবরাখবরও কিছু কিছু রাখিত— চৌধুরীগৃহিণীর একঘেয়ে বড়মানুষী চালের কথাবার্তায় সে বড় বিরক্ত হইয়া উঠিল। খানিকক্ষণ বসিয়া থাকিবার পর, সে লক্ষ্য করিল তাহার সঙ্গিনী ঘোমটার ভিতর হইতে কালো-কালো ডাগর চোখে তাহার দিকে সকৌতুকে চাহিতেছে। বউটর হাসি পাইল, জিজ্ঞাসা করিল— তোমার নাম কি ভাই ? মুশীলা সন্ধিস্বরে বলিল—শ্ৰীমতী মুনীলাম্বলৱী দেবী। মুশীলার রকমন্সকম দেখিয়া বউটর খুব হাসি পাইতে লাগিল। সে বলিল—অত ঘোমটা কিসের ভাই ? তুমি আর আমি ছাড়া তো মার কেউ এদিকে নেই, নাও এস, ঘোমটা খোল, একটু গল্প করি। এই কথা বলিয়া বউটি নিজেই সুশীলার ঘোমটা খুলিয়া দিল—সুশীলার সুন্দর মুখের দিকে