পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল ২৬৯ পরেই যখন কিশোরী পালেদের স্টেটে ভাল চাকরিটা পাইল, তখন নূতন বউ-এর লক্ষ্মীভাগ্য দেখিয়া সকলেই খুব খুশি হইল। সংসারের অলক্ষ্মীস্বরূপ আগের পক্ষের বউ-এর নাম সে সংসারে জার কোনদিন কেন্থ করে না । জলসত্ৰ বুদ্ধ মাধব শিরোমণি-মশায় শিস্য-বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা তখন একটার কম নয়। স্বর্য মাথার উপর থেকে একটু হেলে গিয়েছে। জ্যৈষ্ঠমাসের খররেীত্রে বালি গরম, বাতাস একেবার আগুন, মাঠের চারিধারে কোনদিকে কোন সবুজ গাছপালার চিহ্ন চোখে পড়ে না। এক-আধটা বাবলা গাছ যা আছে তাও পত্রহীন। মাঠের ঘাস রোপোড়া—কটা। ব্রাহ্মণের কাপড়-চোপড় গরম হাওয়ায় আগুন হয়ে উঠলো, আর গায়ে রাখা যায় না । এক-একটা আগুনের ঝলকের মত দমকা হাওয়ার গরম বালি উড়ে এসে তার চোখে-মুখে তীক্ষ হয়ে বিধিছিল। জ্যৈষ্ঠমাসের দুপুরবেলা এ-মাঠ পার হতে যাওয়া যে ইচ্ছে করে প্রাণ দিতে যাওয়ার সামিল, এ-কথা নবাবগঞ্জের বাজারে তাকে অনেক বলেছিল, তবুও যে তিনি কারুর কথা না শুনে জোর করেই বেরুলেন, সে কেবল বোধহয় কপালে দুঃখ ছিল বলেই। পশ্চিম দিকে অনেক দূরে একটা উলুখড়ের ক্ষেত গরম বাতাসে মাথা দোলাচ্ছিল। যেদিকে চোখ যায়, সে-দিকেই কেবল চকুচকে খরবালির সমুদ্র। ব্রাহ্মণের ভয়ানক তৃষ্ণ পেল, গরম বাতাসে শরীরের সব জল যেন শুকিয়ে গেল, জিব জড়িয়ে আসতে লাগলো। তৃষ্ণা এত বেশী হোল যে, সামনে ডোবার পাতা-পচা কালো জল পেলেও তা তিনি আগ্রহের সঙ্গে পান করেন। কিন্তু নবাবগঞ্জ থেকে রতনপুর পর্যন্ত সাড়ে চার ক্রোশ বিস্তৃত এই প্রকাও মাঠটার মধ্যে যে কোথাও জল পাওয়া যায় না, তা তো তাকে কেউ কেউ বাজারেই বলেছিল। এ কষ্ট তাকে ভোগ করতেই হবে। ব্ৰাহ্মণ কিন্তু ক্রমেই ঘেমে নেয়ে উঠতে লাগলেন। তার কান দিয়ে, নাক দিয়ে নিশ্বাসে যেন আগুনের ঝলক বেরুতে লাগলো। জিব জোর করে চুষলেও তা থেকে আর রস পাওয়া বায় না, ধূলোর মত শুকনো। চারিদিকে মাঠ খররেীত্রে নেন নাচছে...চকচকে বালিরাশি রোদ ফিরিয়ে দিচ্ছে . মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঘূর্ণ হাওরা গরম বালি-ধুলেী-কুটাে উড়িয়ে নাকে-মুখে নিয়ে এসে ফেলছে।...অলঙ্ক'পিপাসায় তিনি চোখে ধোৱা-ধেীয়া দেখতে লাগলেন। মনে হোতে লাগলো—একটু ঘন সবুজ মত যদি কোন পাতাও পাই তা হলে চুৰি-জীবনে তিনি যত ঠাও জল খেয়েছিলেন তা এইবার তার একে একে মনে আসতে লাগলো। তার বাড়ির পুকুরের জল কত ঠাণ্ডা...পাহাড়পুরের কাছারির ইদারার জল সে