পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳԵ বিভূতি-রচনাবলী যাননি। তিনি ঝড়-বৃষ্টি থমবার পরে বারান্দীতে এসে আমার পাশে একটা আরাম কেদারায় বসে নীল গল্প করতে লাগলেন। বেশ অমায়িক স্বভাবের ভদ্রলোকটি। বললেন —ক’দিন আপনার খোজ খবর করতে পারিনি, কোনো অসুবিধে হয়নি আপনার ? হ্যা দেখুন, বীণা বলছিল আপনি প্রতিমার ট্রানমেশন রোজ দেখে দেন–কি রকম বুঝছেন, পাস-টাস করবে ? ইংরেজিটা ডেমন জানে না, যদি কিছু না মনে করেন তবে আপনাকে একটু অনুরোধ করি মেয়েটিকে একটু করে দেখবেন আপনার সময় মত? শুধু ইংরিজিটা দেখে দিলেই—ওর মাস্টার ছিল, হঠাৎ মা মারা যাওয়াতে বেচারী জামুরারী মাসে বাড়ি চলে গেল আর এল না—অবিশুি যদি আপনার... বলা বাহুল্য আমাকে এ-বিষয়ে রাজী করাতে র্তার যতটা বাক্য ব্যয় করার প্রয়োজন ছিল, তিনি তার চেয়ে যেন একটু বেশীই করলেন। তারপর দিন-দুই কেটে গেল। প্রতিম রোজ বিকেলে নয় দুপুরে খাতা নিয়ে এসে বসে, সঙ্গে থাকে বীণা ৷ কোন কোন দিন সেও থাকে না। ধরনটি ওর ভারি মিষ্টি অথচ ওর মধ্যে এমন একটা স্বাভাবিক গাম্ভীর্য আছে যা অবাধ পরিচরের পথে একটা সহজ ব্যবধানের স্বষ্টি করে। সেদিন প্রতিমা এসে সামনের চেয়ারখানাতে বসলো। ট্রানস্লেশন দেবার পরে সে মুখ নিচু করে হেসে বললে—এ আমি পারবে ন—এটা বদলে দিন .. আমি বললাম—এমন আর শক্ত কি, করে দেখবে এখন সোজা .. সে পুনরায় ঠিক সেই ভাবে হেসে বললে—ন। আমি পারবে না, আপনি বদলে দিন. যে মুরে সে কথাটা বললে, সেটা অতি শাস্ত মৃদ্ধ হলেও মনে হোল এর পর আর তর্ক চলে না। বদলে দিলাম বটে কিন্তু ভাবলাম মেয়েটি একটু একরোখা ধরনের। পড়াশুনা শেষ করেই প্রতিমা খাতপত্র উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। একটু পরে বিকেলের দিকে আবার খুব ঝড়বৃষ্টি নামলো—এ অবস্থায় বাইরে বেড়াতে যাওয়া উচিত হবে না বুঝে চুপ করে বারানায় আরাম কেদারাটাতে বসে আছি—পেছনে দোর খোলার শব্দ হোল। চেয়ে দেখি আগে আগে বীণা, পেছনে প্রতিমা ঘরে ঢুকছে। প্রতিমার আগমন অনেকটা অপ্রত্যাশিত—কারণ এক পড়াশোনার সময়টি ছাড়া প্রতিমা অন্ত কোন সময়ে আমার এখানে আসেনি কখনো । বীণা ঘরে ঢুকেই বললে—কেমন বৃষ্টি নেমেছে মাস্টারমশায় ? —এসে এসো। ভিজতে ভিজতে এলে যে ? —দিদি বললে আপনি একলাটি বসে আছেন তাই চল গিয়ে গল্প. প্রতিমা তার দিকে ভ্ৰকুট করে বললে—আমি ? পূর্বে ও-কথাটা মনে হয়েছে এখনও মনে হোল, প্রতিমা যে মুনারী তার ব্লাউজের হাতার লাল সিস্কের পাড়ের সঙ্গে মুনীর খাপধাওয়া শুভ্র বাহু দুটির নিটোল গঠনের দিকে চেয়ে একখা মনে মনে অস্বীকার করতে পারলাম না। কিন্তু সকলের চেয়ে অদ্ভুত তার দুটি চোখ ও ভুরু