পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল ՀԵգ: চেনেন না, টাকাও কিছুতেই পাওয়া যায় না। ছ একজন যাদের সঙ্গে পূর্বে পরিচয় ছিল র্তারা টাকাকড়ির হাঙ্গামা শুনে পেছিয়ে গেলেন। অনেক কষ্টে শেষে কাজ মিটলো। ডাকবাংলোয় ফিরেই অফিসের চিঠি পেলাম বিশেষ দরকারে কুমিল্লা যেতে হবে। চিঠি এসে দুদিন পড়ে আছে, আগেই যাওয়া উচিত ছিল, বিলম্বে কার্যক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। ডাক-বাংলোর চাপরাশি বললে রঘু মিশির দু'দিন এসে ফিরে গিয়েছে। এদিকে ট্রেনের সময় সংক্ষেপ, ফেরবার পথেই বীণার সঙ্গে দেখা করা ঠিক করলাম । কুমিল্লা থেকে যেতে হোল চাটগাঁ, সেখান থেকে স্টীমারে বরিশাল, সেখান থেকে কলকাতা । তারপরেই ফাল্গুন মাসে আমার ছোট বোনের বিবাহ উপলক্ষে একমাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি। ছোট বোনের বিবাহ শেষ হয়ে যাবার অল্পদিন পরেই মা পড়লেন অমুখে এবং মাসখানেক ভোগবার পর চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সেরে উঠলেন, কিন্তু চেঞ্জে যাওয়ার দরকার হোল । অফিসে আরও একমাস ছুটির দরখাস্ত করাতে তারা ছুটি তো দিলেই না বরং লিখলে, শীঘ্র কাজে যোগ না দিলে অন্ত লোক বাহাল করবে। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে এক লম্বা পত্র লিখলাম সেখানে । তাই এতদিন পরে ভেবে দেখি জীবনের গতি অপূর্ব, অদ্ভূত। এর চেয়ে বড় রোমান্সের সন্ধান কেউ দিতে পারে না । বীণাকে যখন বলে আসি পরদিন সকালে তার ওখানে যাবো —এমন কি তার মন প্রফুল্ল রাখবার জন্তে তাকে কি সব বই পড়াবো তা পর্যন্ত ভাবতে ভাবতে এসেছিলাম—তখন কে জানতে বীণার সঙ্গে দেখা তো আর হবেই না, আমার ঢাকা যাওয়ার পথই একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর কয়েক বছর কেটে গেল। আইন পাস করে আলিপুর কোর্টে বেরুতে আরম্ভ করলাম। ভবঘুরের জীবন ক্রমে পেছনে পড়ে গেল। মাত্র নির্জন অবসর-মুহূর্তে, বারলাইব্রেরী কক্ষের মক্কেলহীন দুপুর বেলার, মাঝে মাঝে সে-সব দিনের নানা কথা মনে পড়ে— তখন যেন স্বপ্নের মত ঠেকে।. এই সব স্মৃতিতেই জীবন মধুময় হয়ে ওঠে, জীবনের কুঞ্জবনে এরাই গায়ক-পাখী, ফুল-ফলে সকাল দুপুরের সঙ্গে মুর-মেলানো অনস্তমুখী সঙ্গীত এদেরই নিভৃত নীড়াস্তরাল থেকে শোনা যায় । বিবাহের অঙ্কুরোধে বাড়িতে তিষ্ঠানো দায়। জ্যাঠামশায় ভবানীপুরে কোথায় বিবাহের সম্বন্ধ ঠিক করে পাত্রী দেখে এসে খুব প্রশংসা করলেন। জ্যাঠাইমার অনুরোধে তাদের বাসা থেকে রওনা হয়ে বন্ধুবান্ধব সঙ্গে নিয়ে একদিন মেয়ে দেখতে গেলাম। বেলতলা রোডে একতলা ছোট বাড়ি। বাড়ির সামনে ছোট একটু কম্পাউণ্ড, গেটের ওপরকার লোহার জালতিতে খোকা থোকা মাধবীলতার গুচ্ছ। আমরা গিয়ে বৈঠকখানার বসবার অল্পক্ষপ পরেই মেয়েকে আনা হোল । তার মুখের দিকে চেয়েই আমি চমকে উঠলাম। বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বার হোল না। ৰীণা ••