পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵՆ বিভূতি-রচনাবলী নিয়ে সেটা খানিকক্ষপ বসে বসে বালি দিয়ে মেজে বকৃষ্ণকে করে তুললো। বিছানার ধারে পানে ভর্তি ডিবেট। রেখে দিয়ে হাসিমুখে বললে—দু'আনা পয়সা দিন আমাকে... মুরেশ বুঝতে না পেরে বললে—কেন বলো তো ? —বে মারা গিয়ে সন্নিসী হয়েছেন বুঝি ? না মশলা, না একটু এলাচ দালচিনি। শুধু ধনের-চাল দিয়ে পান সাজা-পয়সা দিন, আমি ভজুয়া পয়েণ্টলম্যানকে দিয়ে আনিয়ে রাখবো বাজার থেকে... এক এক দিন তার কোটটার পকেট থেকে ময়লা রুমালখানা বালিশের তোয়ালেখানাকে সাবান দিয়ে ধুয়ে রৌদ্রে দড়ির টানায় মেলে দিয়ে চলে গিয়েছে, ট্রেন পাস করে বাসায় ফিরে এসে সে দেখতে পায় । তারপর উপরি উপরি দিন কয়েক সে অদৃগু সেবা-হস্তের সন্ধান পাওয়া যায় না, হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে একদিন চোখে পড়ে ঘরের তক্তপোশের নিচে তার ছোট পাখর-বাটিতে এক বাটি বেলের শরবৎ কে সযত্বে ঢাকা দিয়ে রেখে গিয়েছে। স্কুল-মাস্টারদের মেসের বাসায় তাস খেলার ফাঁকে ফঁাকে অন্তমনস্ক হয়ে পড়ে। টিকিটবিক্রির জানালায় পয়সা গুণে দিতে দিতে ভুল হয়, নির্জন শয্যা প্রাস্তের সাখী মাদার গাছটার অন্ধকার ডালপালার সীমারেখা আরও অদ্ভুত অদৃষ্টপূর্ব মনে হয়।. ঝি পাচীর-মা সেদিন অত্যন্ত বেলায় কাজ করতে এল । কৈফিয়তের স্বরে বললে—একটু বেলা হয়ে গেল বাবু, এই দুপুরের গাড়িতেই রেণু দিদি আবার চলে যাবে কিনা তাই সকাল সকাল বড়বাবুদের পাট সেরে তবে আসছি।. মুরেশ যেন আকাশ থেকে পড়লো। বললে—রেণু? আজ চলে যাবে ? কই তা তো.. কেন আজ কেন ? আমি তো কিছুই জানিনে... কথাটা বলেই সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে চুপ করে রইলো। পরের বাড়ির মেয়ে, তার সঙ্গে তো পরামর্শ ক’রে মেয়েটির যাতায়াত ধার্য হবে না। যায় যাক না—তার কি ? পাচীর-মা বললে—নিজের বাপের কাছে চলে যাবে। বাপ সেখানে বিয়ের সম্বন্ধ করেছে কিনা তাই মেয়ে দেখতে আসবে। গেলেই বাচে, যে মামী—থাটিয়ে খাটিয়ে মুখে রক্ত উঠিয়ে মারে, না একটু যত্ন—না একটু আত্তি . বারোটার ডাউন ট্রেন আলবার বেশী দেরী নেই। সুরেশ এই মাত্র খেয়ে উঠে পান মুখে দিয়ে কোট পরছে, রেণু বাসার সদর দরজা পার হয়ে উঠানে এসে ঢুকলো। একটু যেন ইতস্তত করে পরে ঘরে ঢুকে বললে—আমার একটা সেপটি-পিন সেদিন কি এখানে ফেলে গিয়েছি ? মুলার করে চুল-বাধা, পরেন খয়েরী রঙ-এর জমির ওপর প্লেন জরির কাজ করা ছেলেমানুষের মতে শাড়ি, গলায় সরু চেনহার, একরাশ ঘন কৃষ্ণ চুলে ভরা শান্ত মুখ । সুরেশ বললে—তুমি আজ চলে যাবে রেণু কই সে কথা তো জানিনে ? এই বারোটার গাড়িতেই বুঝি ? রেণু এ-কোণে ও-কোণে কি খুজছিল। বললে—ঙ্গাবার এই কাচের গেলাসটা সোজা