পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীকুল ২৯৯ দেবীর হলেও, তাতে বৌদ্ধ-ভাস্কর্ষের কিছু প্রভাব আছে বলে মনে হয়েছিল। হাতে বীণা না থাকলেও দেবী না হয়ে দেবমূর্তি হলে, তাকে মঞ্জুঐ মূর্তি বলে অনায়ালে ধরে নেওয়া যেতে পারতে | মূর্তিটা যখন পরিষ্কার করে আমার সামনে আনা হোল, তখন তার দিকে চেয়েই আমি চেয়ার থেকে উঠে পড়লাম। অনেক মূর্তি গত পনরো বৎসর ধরে পরীক্ষা করে আসছি— কিন্তু এ কি ? বাটালির মুখে পাথর থেকে হাসি ফুটিরে তুলেছে কি করে । খানিকক্ষণ একদৃষ্টে মৃত্তিটার দিকে চেয়ে রইলাম। আমি খুব কল্পনাপ্রবণ নই, কিন্তু সেদিন সেই নিবন্ধ দুপুরবেলায় পত্রবিরল ঘোড়-নিম গাছটার তলায় দাড়িয়ে আমার মনের মধ্যে কেমন গোলমাল হয়ে গেল। অল্পক্ষণ-“অবশ্ব খুব অল্পক্ষণের জন্তে মনের মধ্যে এক অপূর্ব ভাব...সৌন্দর্ষে ঝলমল চকুচকে কাল পাথরের পালিশ করা নিটােল সে দেবীমূর্তির, তার মুখের দৃঢ়রেখাগুলির, দেহের গঠনের শিল্প-ভঙ্গির হাতের আঙ্গুলগুলি বিস্তাসের মুনীর ধরনের-সকলের ওপর মূর্তির মুখের সে হালি-মাখা জীবন্ত সৌন্দর্যের দিকে চেয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। শিল্পের যে প্রভাব কালকে তুচ্ছ করে যুগে যুগে মামুষের প্রাণ স্পর্শ করছে, তার সঙ্গে সত্যিকার পরিচয় সেই আমার প্রথম হোল।...জয় হোক সে অতীত যুগের অজ্ঞাত-নাম শিল্পীর জয় হোক তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভার . মুক্তিটাকে বাড়ি নিয়ে এসে, আমার লাইব্রেরীতে কাগজ চাপা ধ্যানিবুদ্ধের দলের মধ্যে তাকে রেখে দিলাম। রোজ সকালে উঠে দেখতাম—-দীর্ঘ প্র-রেখার নিচে বঁাশ-পাতার মত টানা চোখ দুটোর কোণ হাসিতে যেন দিনদিন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন ধরে নানা কথা মনে হতে লাগলো। খুড়তে খুঁড়তে এমন কোনো জিনিস পাই নি, যাতে মূর্তিটির বা ভিটার সময় নিরূপণ করতে পারি। তবে মৃতিটি গুপ্তযুগের পরবর্তী সময়ের এবং পূর্ববঙ্গের শিল্পীর হাতে তৈরী, এটা আমি তার মাথার ওপর ছাতার মত চিহ্ন দেখে কতকটা আনাজ করতাম। পাথরের মূর্তির মাথার ওপর এই গোল ছাতার মত চিহ্ন, পূর্ববঙ্গের ভাস্কর্যের একটা রীতি—এ আমি অন্ত অন্ত মূর্তিতেও দেখেছি। সেদিন রবিবার। সন্ধ্যাবেলাটা আমার এক প্রতিবেশী বন্ধুর সঙ্গে এক বাজী দাবা খেলে সকাল সকাল শুতে গেলাম । এইবার যে কথা বলবে, সে কেবল তুমি বলেই তোমার কাছে বলছি—অপরের কাছে এ কথা বলতে আমার বাধে ; কারণ, তারা আমার বিশ্বাস করবেন না । অনেক রাতে কি জানি কেন হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ঘরের মধ্যে কিসের অত্যন্ত সুগন্ধ পেলাম। পূজার মন্দিরে যেমন ধূপধুনো গুগগুল, ফুল, ঘি চন্দন সবসুদ্ধ মিলে একটা স্নিগ্ধ সৌরভ পাওয়া ধায়, এটা ঠিক সেই ভাবের। সুগন্ধটা আমার নিদ্রালস মস্তিষ্কের মধ্যে গিয়ে আমায় কেমন একটা নেশায় অভিভূত করে ফেললো। রাত ক'টা হবে ঠিক জানি না.মাথার কাছে ঘড়িটা টিক্‌টিক্‌ করছিল-'হঠাৎ দেখলাম, খাট থেকে কিছুদূরে ঘরের মেঝের কে একজন দাড়িয়ে... র্তার মস্তক মুণ্ডিত, পরণে বৌদ্ধ পুরোহিতের মত্ত হলদে পরিচ্ছদ-মুখের হাতের অনাবৃত্ত