পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল «Φονδ সেবার রাজ্য জুড়ে মড়ক উপস্থিত হোল। চারিদিকে লোক বর্ষাকালের বাদল-পোকার মত্ত মরতে শুরু করে দিল । রাজ্যময় মহা হাহাকার । নিরাপ্রয় রোগীদের ভিড়ে নগরের আরোগশালাগুলি ভর্তি হয়ে গেল। নতুন রোগী এসে আর স্থান পায় না নগরের পথের ওপর তাদের মৃতদেহের স্তুপ ক্রমেই উচু হয়ে উঠতে লাগলো। সকল রকম সৎকার্যের চিন্ত দাতা কর্ণসেনেরই মনে সকলের আগে এসে পৌছতো । রাত্রে শুয়ে তার হেল—এক কাজ করি না কেন ? আমার এই এত বড় প্রাসাদ যদি আরোগ্যশালার জন্তে ছেড়ে দিই, তবে কত রোগী এখানে এসে আশ্রয় নিতে পারে। আমার এত বড় প্রাসাদে কি প্রয়োজন ? পর মুহূর্তেই তার মনে হোল—ওই। ওই যে আমার মনে একথা উঠলো, সে শুধু এই বিশাল রাজ্যের মধ্যে ভগবানের একমাত্র চিহ্নিত দাস বলেই। কই, আর তো কেউ. তথনিই আবার ভাবলেন—না, ছিঃ, ও-সব অহঙ্কারের কথা । সেদিন সমস্ত দিন ধরে তার মনে হতে লাগলে—দিই বাড়িখানা ছেড়ে ! লোকে এসে এখানে আশ্রয় নিকৃ। তারপর তিনি ভাবলেন—ন, যাক গে যাক । বাড়ি দেবার কোনো দরকার নেই। কতদিন এ মড়ক চলবে তার কিছু ঠিকানা নেই, বাড়ি ছেড়ে দেওয়া, সে যে মহা অসুবিধে । পথ চলতে চলতে তার চোখে পড়তে, নিরাশ্রয় আর্তদের অসহায় শীর্ণ মুখগুলি ! র্তার মন তখনি দয়ার আবেগে ভরে উঠতো, ভাবতেন—দিই বাডি ছেড়ে ! এদেরই তো বাড়ি। ভগবান আমার মধ্যে দিয়ে তার দয়া প্রকাশ করেছেন, এই ইচ্ছা তারই দেওয়া. মনের এক গভীর গোপন-তল থেকে এ-কথা জাগতো—উঃ ! দেখছ, দেখছ! মনটা অামার কি রকম দেখেছ একবার | হতভাগ্য দরিদ্রের মৃত্যুকাত্তর শীর্ণ শুষ্ক মুখগুলো মনে করে তার চোথে জল আসতো। মনে তার উচুভাবের ঢেউ এল—গেল। অন্তান্ত বার এই সব ভাবের আবেগেই তিনি অকাতরে পরের দুঃখ মোচন করে এসেছেন, এবার কিন্তু তিনি মনের সে ভাবটাকে চেপে রাখলেন। ভাবলেন—ন না, বাড়ি নয়, টাকা যেমন দিই, তেমনি কিছু দেব এখন । মনের সে গোপন-তল থেকে এ-কথা উঠলো—আমি যে খারাপ লোক তা তো নয় । কতবার তো কত দিয়েছি—এবার যদি নাই দিই ? আর লোক যে আমি কুপর্ণ তাও তো নয়—আমি উচুই। তবে এবার · সেবাযত্ব শুশ্ৰুষার অভাবে মৃত হতৃভাগ্য দরিত্রের শবের পূতিগন্ধে নগরের বাভাস ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো । এমন সময়ে হঠাৎ একদিন শোনা গেল যে, নগরের এক কৃপণ-ধনী—এ পর্যন্ত বিনি কোনো সৎকাজে এক কানাকড়িও কোনো দিন দান করেন নি–র্তার বৃহৎ অট্টালিকা ছেড়ে দিয়েছেন নিরাশ্রয় রোগীদের আরোগ্য লাভের জন্ত ।