পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল vථ`` নন্দলাল পড়িয়া গেল মহা বিপদে । না আছে চাকরি, না আছে কোন সম্বল—ওদিকে অমুম্বা তরুণী-বধূ ঘরে। বীজপুরের কারখানায় কয়েকবার যাতায়াতের ফলে একজন রঙের মিস্ত্রির সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়া গিয়াছিল। তাহাকে বলিয়া কহিয়া তাহার বাসায় বউকে লইয়া গিয়া আপাতত: তুলিল। দুইটি মাত্র ঘর, একখানা ঘরে মিস্ত্রি একলা থাকে, অন্ত ঘরখানি নন্দলালকে ছাড়িয়া দিল! মিস্ত্রি গাড়িতে অক্ষর লেখে—সে চেষ্টা করিয়া সাহেবকে ধরিয়া নন্দলালের জন্য একটা ঠিক কাজ জুটাইয়া দিল। একটা বড় লম্ব রেক আগোগোড়া পুরানো রং উঠাইয়া নূতন রং করা হইবে, নন্দলাল জমির রং করিবার জন্তু এক মাসের চুক্তিতে নিযুক্ত হইল । রাঘব চক্রবর্তী কিছুকালের জন্য হাফ ছাড়িয়া বঁচিলেন। হঠাৎ একদিন তিনি অনেকজন মজুর ধরিয়া বাড়ির উঠান পরিষ্কার করাইতে লাগিলেন । শখ করিয়া একজোড়া হরিণের চামড়ার জুতা কিনিয়া আনিলেন, এমন কি পূজার সময় একবার কাশী বেড়াইতে যাইবার সঙ্কল্প করিয়া ফেলিলেন । আশ্বিনের প্রথমে বর্ষ একটু কমিল। রাঘব চক্রবর্তী বাড়ির চারিধারে পাচিল গথিবীর মিস্ত্রী খাটাইতেছিলেন, সারাদিন পরিশ্রমের পর গঙ্গায় গা ধুইয়া আসিয়া সন্ধ্যার পরই তিনি শুইয়া পড়িলেন। অত পরিশ্রম করিবার পর তিনি শুইলেন বটে, কিন্তু তাহার ঘুম আদৌ আসিল না। ঘুমাইবার বৃথা চেষ্টায় সারারাত্রি ছটফট করিয়া শেষ রাত্রে উঠিয়া তামাক খাইতে বসিলেন। দিনমানেও দুপুরে ঘুমাইবার চেষ্টা করিলেন, কিছুতেই ঘুম হইল না। সারাদিনের মজুর খাটাইবার পরিশ্রমের ফলে শরীর যা গরম হইয়াছে ! সেদিনও যখন রাত্রে ঘুম আসিল না, তখন পাচিল-গাথার জনমজুরকে বলিয়া দিলেন—এখন দিন দুই কাজ বন্ধ থাকুক। পরদিন রাত্রে সামান্ত কিছু আহার করিয়া ঠাণ্ডা জল মাথায় দিয়া ও হাত-পা ধুইয়৷ সকাল সকাল শুইয়া পড়িলেন। প্রথমটা ঘুম না আসাতে ভাবিলেন, ঘুমের সময় এখনও ঠিক হয় নাই কিন, তাই ঘুম আসিতেছে না। এ-পাশ ও-পাশ করিতে লাগিলেন। দশটা ...এগারোটা-বারোটা.রাঘব প্রাণপণে চক্ষু বুজিয়া রহিলেন, নানাভাবে ঘুরির ফিরিয়া শুইয়া দেখিলেন—ঘুম এখনও আসে না কেন ? অারও ঘণ্টা দুই কাটিয়া গেল—ঘুমের চিহ্নও নাই ! চাদ ঢলিয়া পড়িল, জানাল দিয়া যে বাতাস বহিতেছে তাহা আগেকার অপেক্ষা ঠাণ্ড!--রাঘবের কেমন ভয় হইল—তবে বোধহয় আজও ঘুম হইবে না! ভাবিতেও বুকটা কেমন করিয়া উঠিল। আজ রাত্রে না ঘুম হইলে কাল তিনি বাচিবেন কি করিয়া ?. উঠা মাথায় আর একবার জল দিলেন—মুবার শুইলেন, আবার প্রাণপণে ঘুমাইবার চেষ্ট করিলেন। কিন্তু এই ভাবিয়া তাহার মাথা গরম হইয়া উঠিল—ঘুম...যুম যদি না আসে। তাহা হইলে ?...রাত্রি ফরসা হইয়া কাককোকিল ডাকিয়া উঠিল তখনও হতভাগ্য রাঘব চক্রবর্তী বিছানায় ছটফট করিতে করিতে ঘুমাইবার বৃথা চেষ্টা করিতেছেন । ঠিক এইভাবে কাটিয়া গেল আরও আট দিন। এই আট দিনের মধ্যে কি দিনে, কি