পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল "రిసిసి দেশ থেকে কলকাতায় এসেছি। ছুটির সময় রাজচন্দ্রবাবু তার দেশ ঢাকা জেলার চলে যেতেন তা জানতাম। এসেছেন কিনা দেখতে তাদের বাসায় গেলাম। প্রভাবতীকে দেখতে পেলাম না। বাড়িতে অন্ত কোন চাকর-বাকরও ছিল না—সকলে ওপরের ঘরে আছেন ভেবে সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠে রাজচন্দ্রবাবুর ঘরে ঢুকতেই দেখলাম, তিনি একমনে কি লিখছেন— মুখ তুলে আমাকে দেখেই রুক্ষসুরে গরম মেজাজে বলে উঠলেন—কে ? যাও যাও, ধাও যাও• • • কথা শেষ না করেই যেন মনে হোল, তক্তপোশ থেকে কি যেন একটা তুলে ছুড়ে মারতে গেলেন । হঠাৎ পেছন থেকে চোখ টিপে ধরলে, মানুষ যেমন অতর্কিতভাবে হতভম্ব হয়ে পড়ে— সেই রকম হয়ে পিছু হটে রাজচন্দ্রবাবুর ঘর থেকে বার হয়ে এলাম। পরে কাঠের পুতুলের মত মুখ ফিরিয়ে সিড়ির ধাপ বেয়ে নামতে গিয়েই দেখি, প্রভাবতী উদ্বিগ্ন মুখে দাড়িয়ে— বোধহয় চীৎকার শুনে তিনি এইমাত্র নিচে থেকে ছুটে উঠে আসছিলেন । আমাকে দেখে শুকমুখে বললেন—আসুন, নিচে আমুন অমলবাবু। দেশ থেকে কবে এলেন ? আমার বিস্ময় তখনও যায় নি, কথার উত্তর খুঁজে দিতে দেথি তার চোখ দুটি জলে ভরা। বললেন—আজি মাসখানেক হোল বাবা ওই রকম হয়েছেন—এক আমি ছাড়া কেউ কাছে যেতে পারে না। থান না, শোন নী—কি সব অঙ্ক কষেন বসে বসে রাতদিন । মাথা একেবারে ঠিক নেই–ছুটিতে দেশে যাওয়া হয় নি। কি যে হবে অমলবাবু। র্তাকে যথেষ্ট সাহস ও সাস্তুনা দিয়ে সেদিন হোস্টেলে ফিরলাম। তারপর কয়েকমাস প্রতুল ও আমি রাজচন্দ্রবাবুর ওখানে প্রায়ই যেতাম। তাদের দেশ থেকেও প্রভাবতীর বড়মামা এসে কিছুদিন থাকলেন । কলেজে তার চাকরি আর বেশীদিন থাকা সন্দেহের বিষয় হয়ে দাড়ালো । দিন দিন তার অপ্রকৃতিস্থত যেন পরিস্ফুট হয়ে বেড়ে যেতে লাগলো। বেচারী নলিনাক্ষবাবু প্রকৃতিত্ব অবস্থাতেই তাকে সামলাতে হিমসিমূখেতেন, এ অবস্থায় তো হাল ছেড়ে দিয়ে শুধু প্রিক্ষিপালের কাছে লম্বা লম্বা নোট পাঠাতে লাগলেন । চাকরিতে দীর্ঘদিনব্যাপী ছুটি নিয়ে নিয়ে শেষে ইস্তফা দিতে হোল । তারপর কলকাতার বাস উঠিয়ে তারা চলে গেলেন শিবপুর ব্যাটরা অঞ্চলে। সেখান থেকে চলে গেলেন চন্দননগরে গঙ্গার ধারে একটা ছোট বাড়িতে। ইতিমধ্যে প্রতুল একবার সেখানে গিয়েছিল। ফিরে এসে বললে, তারা সামান্তভাবে আছেন, খড়ের বাংলো ঘরে থাকেন। রাজচন্দ্রবাবু অনেকটা ভাল আছেন। কলকাতার বাইরে গিয়ে অনেকটা স্বস্থ হয়েছেন আজকাল । রোজ সন্ধ্যার আগে গঙ্গার ধারে খুব বেড়ান, কোনো কোনো দিন গ্রামের বাইরের মাঠে গিয়ে এক জায়গায় বসে বসে ওয়াটার-কলার ছবি আঁকেন শুনলাম। এ সংবাদটা নতুন এবং অদ্ভুক্ত লাগলো। তুলি ও ইজেল হাতে রাজচন্দ্রবাবুর ছবিটা মনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারলাম না কোনো রকমে। ডাক্তারের