পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত & লীলার সম্বন্ধেও অপুর ঠিক সেই কথাই মনে হইল। এ যেন সে লীলা নয়, যাহার সঙ্গে সে দেড় বৎসর পূর্বে অবাধে মিলিয়া মিশিয়া কত গল্প ও খেলা করিয়াছে। তাহার তো মনে হয় না লীলার মত সুন্দরী মেয়ে সে কোথাও দেখিয়াছে—রাণুদিও নয়। খানিকক্ষণ সে যেন চোখ ফিরাইতে পারিল না। দু'জনেই যেন একটু সঙ্কোচ বোধ করিতে লাগিল । অপু বলিল, তুমি কি ক’রে এলে? আমি আজ সকালেও জিজ্ঞেস করিচি। নিস্তারিণী মাসী বললে, তুমি আসবে না, এখন স্কুলের ছুটি নেই—সেই বড়দিনের সময় নাকি আসবে ? লীলা বলিল, আমার কথা তোমার মনে ছিল ? —ন, তা কেন ? তারপর এতদিন পরে বুঝি—বেশ–একেবারে ডুমুরের ফুল— —ডুমুরের ফুল আমি, না তুমি ? খোকামণির ভাতের সময় তোমাকে যাওয়ার জন্তে চিঠি লেখালাম ঠাকুরমায়ের কাছে, এ বাড়ির সবাই গেল, যাও নি কেন ? অপু এসব কথা কিছু জানে না। তাছাকে কেহ বলে নাই। জিজ্ঞাসা করিল,খোকামণি কে ? লীলা বলিল, বা আমার ভাই! জানো না ?..এই এক বছরের হলো । লীলার জন্ত অপুর মনে একটু দুঃখ হইল। লীলা জানে নযাহাকে সে এত আগ্রহ করিয়া ভাইয়ের অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিল, এ বাড়িতে তাহার স্থান কোথায় বা অবস্থাকি। সে বৃলিল—দেড় বছর আসো নি—না 7 পড়চ কোন ক্লাসে ? লীলাতক্তপোশের কোণে বসিয়া পড়িল । বলিল, আমি আমার কথা কিছু বলবো না আগে—আগে তোমার কথা বলে। তোমার মা ভাল আছেন ? তুমিও তো পড়ো—না ? —আমি এবারে মাইনর ক্লাসে উঠবে।—পরে একটু গর্বিত মুখে বলিল, আর বছর ফাস্ট হয়ে ক্লাসে উঠেচি, প্রাইজ দিয়েচে । লীলা অপুর দিকে চাহিল। বেলা তিনটার কম নয়। এত বেলায় সে খাইতে বসিয়াছে ? বিস্ময়ের স্বরে বলিল, এখন খেতে বসেচ, এত বেলায় ? অপুর লজ্জা হইল। সে সকালে সরকারদের ঘরে বসিয়া খাইয়া স্কুলে যায় —শুধু ডালভাত,—তাও শ্ৰীকণ্ঠ ঠাকুর বেগার-শোধ ভাবে দিয়া যায়, খাইয়া পেট ভরে না, স্কুলেই ক্ষুধা পায়, সেখান হইতে ফিরিয়া মায়ের পাতে ভাত ঢাকা থাকে, বৈকালে তাহাই খায় । আজ ছুটির দিন বলিয়া সকালেই মায়ের পাতে থাইতে বসিয়াছে। অপু ভাল করিয়া উত্তর দিতে পারিল না বটে, কিন্তু লীলা ব্যাপারটা কতক না বুঝিল এমন নছে। ঘরের হীন আসবাব-পত্র, অপুর হীন বেশ—অবেলায় নিরুপকরণ দুটি ভাত সাগ্রহে খাওয়া—ীলার কেমন যেন মনে-বড় বিধিল। সে কোন কথা বলিল না । অপু বলিল, তোমার সব বই এনেচ এখেনে ? দেখাতে হবে আমাকে। ভাল গল্প কি ছবির रहे cनहे ? লীলা বলিল, তোমার জন্তে কিনে এনেচি আসিবার সময়। তুমি গল্পের বই ভালোবাসো বলে একখানা লাগরের কথা এনেচি,আরও দু-তিনখন এনেচি। আনচি, তুমি খেয়ে ওঠে।