পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল VIII চাটুষ্যে-গিৰী সুরেনের হাতছটি ধরিয়া বলিলেন—দাদাভাই, এ কাজ ঘাতে বোশেখ মাসের মধ্যে হয় তা তোমাকে করতেই হবে। নিভাননীকে তোমায় নিতেই হবে। দেখে শুনে তো সবই গেলে, তোমার বাবাকে গিয়ে পাঠিয়ে দিও, এসে মেয়ে আশীৰ্বাদ ধেন করে যান। আমার কথা দিয়ে যাও, যে এতে তোমার অমত নেই। গিয়েই পত্তর দিও দাদা" স্বরেন চলিয়া গেলে দিন কতক গ্রামে তাহার সম্বন্ধে আলোচনা চলিল এবং সাতকড়ি ছাড়া অন্ত সবাই ছেলেটিকে খুব পছন্দ করিয়াছে। কৈলাস ভট্চায তো সকলের কাছে তাহার শতমুখে প্রশংসা করিয়া বেড়াইলেন। একদিন করিয়া সপ্তাহ খানেক কাটিয়া গেল। স্বরেনের কোনো পত্র বা সংবাদ কিছুই আসিল না। চাটুয্যে-গী অভ্যস্ত ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। ক্রমে দিন বারো কাটিল। কোনো খবর নাই। চাটুয্যে-গিনী মুরেনের ঠিকানায় কৈলাস ভট্চাযকে দিয়া লিখাইয়া রেস্ট্রেী পত্র দিলেন । আরও দিন কতক কাটিল, সে-পত্রের কোনো জবাব আসিল না। চাটুয্যে-গিৰী কৈলাস ভট্চাযের কাছে আসিয়া কাদিয়া পড়িলেন। কৈলাসের নিজের বড় ছেলে রাম, পাশের গ্রামের নবীন কাপালির সঙ্গে দিনকতক ভাগে কাঠালের ব্যবসা করিয়াছিল ; বার তিনেক কাঠালের চালান লইয়া কলিকাতায় গিয়াছিল ; সুতরাং তাহাকেই মুরেনের বাসার ঠিকানা দিয়া কলিকাতা পাঠান হইল। তিন দিন পরে রাম ফিরিল। কলিকাতার মেসের সেই বাবুট একথান পত্ৰ দিয়াছেন, সেখানা সে বাবার হাতে দিয়া চুপ করিয়া রহিল। কৈলাস পত্ৰখানা খুলিয়া পড়িলেন। স্বরেন বাচিয়া নাই। এখান হইতে ফিরিয়া দিনকতক পরে সে নিজের দেশে অর্থাৎ মামার বাড়িতে যায় পিতার সঙ্গে সব কথা খুলিয়া বলিতে, সেখানে কলেরা হইয়া মারা গিয়াছে। সময় কাহারও জন্ত অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকে না। পরের শ্রাবণেই নিভাননীর বিবাহের দিন স্থির হইয়া গেল। পাড়ার বড় চওঁীমওপটাতে আবার বিস্তৃত বরাসন পাতা হইয়াছে। দুপুরের পর হইতে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা জড় হইয়া ভিড় করিতেছে। গ্রামস্বদ্ধ সবারই আজ চাটুয্যে-বাড়ি নিমন্ত্ৰণ—মৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পাড়াটুকু যে তাহানয়, শূদ্রভদ্র সবারই। কৈলাস ভট্টচাষ ব্যস্ত আছেন ; কারণ চাটুখ্যেদের পুকুরে সব ছোট মাছ বলিয়া মহিমপুরের নিকারীদের মাছের বায়না দেওয়া হয়েছে, মাছ এখনও আসিয়া পৌছার নাই। বৈকালে বরের দল আসিল । বরের বাড়ি এদিকেই, গোটাদুই স্টেশন পরেই। ইহাদের আনিতে বরের পান্ধী বাদে খান পাচছয় গুরুর গাড়িও স্টেশনে গিয়াছিল। বরযাত্রীদের মধ্যে বুদ্ধের দলই বেশী, দুই একটি বালকও আছে। মেয়ের চণ্ডীমণ্ডপের সামনে পথের ধারে বরকে অভ্যর্থনা করিবার জন্ত ভিড় করিয়া দাড়াইয়াছিল। মেটে হাড়ীর ভিতর দৃষ্টি-প্রদীপ লইয়া কৈলাস ভট্টচাষের স্ত্রী অপেক্ষ করিতেছিলেন। চাটুয্যে-গিয়ী একটু পিছনে দাড়াইয়াছিলেন।