পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

}o বিভূতি-রচনাবলী অপুর খাওয়া প্রায় শেষ হইয়াছিল, খুশিতে বাকীটা কোনো রকমে শেষ করিয়া উঠিয়া পড়িল । লীলা লক্ষ্য করিয়া দেখিল, সে পাতের সবটা এমন করিয়া থাইয়াছে, পাতে একটা দানাও পড়িয়া নাই। সঙ্গে সঙ্গে তাহার উপর লীলার কেমন একটা অপূর্ব মনের ভাব হইল —সে ধরণের অনুভূতি লীলার জীবনে এই প্রথম, আর কাহারও সম্পর্কে সে ধরণের কিছু তো কখনও হয় নাই। একটু পরে লীলা অনেক বই "ননিল। অপুর মনে হইল, লীলা কেমন করিয়া তাহার মনের কথাটি জানিয়া, সে যাহা পড়িতে জানিতে ভালবাসে সেই ধরণের বইগুলি আনিয়াছে। সাগরের কথা বইখানাতে অদ্ভুত অদ্ভূত গল্প। সাগরের তলায় বড় বড় পাহাড় আছে, আগ্নেয়গিরি অাছে, প্রবাল নামক এক প্রকার প্রাণী আছে, দেখিতে গাছপালার মত— কোথায় এক মহাদেশ নাকি সমুদ্রের গর্ভে ডুবিয়া আছে—এই সব। লীলা একখানা পুরাতন খাতা দেখাইল । তাহার ঝোক ছবি আঁকিবার দিকে ; বলিল —সেই তোমায় একবার ফুলগাছ একে দেখতে দিলাম মনে আছে । তারপর কত একেচি দেখবে ? இ * অপুর মনে হইল লীলার হাতের আঁকা আগের চেয়ে এখন ভাল হইয়াছে। সে নিজে একটা রেখা কখনো সোজা করিয়া টানিতে পারে ন—ড়ইংগুলি দেখিতে দেখিতে লীলার দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বেশ একেচো তো । তোমাদের ইস্কুলে করায়, না এমনি আঁকো ? এতক্ষণ পরে অপুর মনে পড়িল লীলা কোন স্কুলে পড়ে, কোন ক্লাসে পড়ে। সে কথা কথা কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয় নাই। বলিল—তোমাদের কি ইস্কুল ? এবার কোন ক্লাসে পড়চো ? —এবার মাইনর সেকেণ্ড ক্লাসে উঠেচি—গিরীন্দ্রমোহিনী গালর্স স্কুল—আমাদের বাড়ির পাশেই— অঞ্জু বলিল, জিজ্ঞেস করবো ? লীলা হাসি মুখে ঘাড় নাড়িয়া চুপ করিয়া রহিল। অপু বলিল, আচ্ছ বলো-চট্টগ্রাম কর্ণফুলির মোহনায়—কি ইংরেজি হবে ? লীলা ভাবিয়া বলিল, চিটাগং ইজ, অন্‌ দি মাউথ অফ দি কর্ণফুলি। অপু বলিল, ক’জন মাস্টার তোমাদের সেখেনে ? —আটজন, হেড মিস্ট্রেস্ এণ্টান্স পাশ, আমাদের গ্রামার পড়ান। পরে সে বলিল— মা’র সঙ্গে দেখা করবে না ? 蟾 —এখন যাবে, না একটু পরে যাবো ? বিকেলে যাবো এখন, সেই ভাল।-- তাহার পরে সে একটু থামিয়; বলিল, তুমি শোন নি লীলা, আমরা ষে এখান থেকে চলে যাচ্চি । e লীলা আশ্চর্ষ হইয়া অপুর দিকে চাহিল। বলিল—কোথায় ?