পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক WoSS) ছিলাম বছর কয়েক আগে—কাজেই রান্ত পাছে ভুল হয়, এজন্তে লোকজনকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে করতে চলেচি। একজন বললে—বাগান গা যাবেন, তা অত ঘুরে যাচ্ছেন কেন বাৰু? কাচিকটার খেয়া পার হয়ে সবাইপুরের মধ্যে দিয়ে চলে যান না কেন ? তার কথা শুনে ভুল করেছিলুম, পরে বুঝলুম। প্রথম তো যে রাস্তায় এসে পড়লুম-- সে হচ্ছে একদম মেঠোপথ—তাঁর ত্রিসীমানায় কোনো বসতি নেই। তার ওপর রাস্তার কিছু ঠিক নেই, কথনো মাঠের আলের ওপর দিয়ে সরু পথ, কখনো পড়ে জল আর নলখাগড়ার বন, কখনো শোলা বন । মাঠের গায়ে রৌদ্রও প্রচণ্ড । খেয়া পার হয়ে ক্রোশ থানেক অতি বিশ্রী পথ হেঁটে অত্যন্ত প্রাস্ত হয়ে পড়েচি। দূরে একটা বটগাছ দেখে তার তলায় বসে একটু জিরিয়ে নেবো বলে সেদিকে খানিকদূর গিয়ে দেখি আমার আয় বটগাছের মধ্যে একটা প্রকাও জলার ব্যবধান। সুতরাং আবার ফিরলুম। মাঠের মধ্যে একটা রাখাল ছোকরা গরু চরাচ্চে, তালপাতার ছাতি মাথায় দিয়ে। তাকে বললুম—সবাইপুর আর কতদূর রে ? —ওই তো বাবু দেখা যাচ্চে— সে অনেকদূরে মাঠের প্রান্তে বনরেখার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে। আমি খানিকট এগিয়ে যেতেই সে আবার ডেকে বললে—কোথায় যাবেন বাৰু ? —বাগান গ| চিনিস ? —না বাৰু। তা আপনি সবাইপুরের খোজ কত্তিছেন কেন তবে ? —ওই তো যাবার পথ— —ও পথে আপনি কি যাতি পারবেন বাৰু ? সবাইপুরের বাওড় পার হবেন কেমন করে ? সবাইপুরের বাওড়ের নাম শুনেচি, কিন্তু সে যে এ পথে পড়ে তা জানতুম না। জিজ্ঞেস করে জানা গেল খেয়ার নামগন্ধ মেই—সীতার দিয়ে পার হওয়া ছাড়া আর উপায় কি ? ফিরে আসবো ভাবচি, এমন সময় রাখাল ছোকরা আবার বললে—আপনি বাবু এক কাজ করুন, সবাইপুরের বিশ্বেসরা বাধল দিয়েচে, সেখেন দিয়ে পার হয়ে যান মাছ ধরবার জন্তে বঁাশ বেঁধে ধে লম্বা জাল টাঙিয়েছে—বাশের ওপর চড়ে অতিকষ্ট্রে বাওড় পার হয়ে এপারে এলুম। কিছুদূরে গায়ের মধ্যে একটা কাদের খড়ের বাড়ি। আমি গিয়ে বললুম-ওহে একটু জল খাওয়াতে পারো ? একটা লোক বেড়া বাধছিল উঠোনের কোণে, সে বললে—আপনারা ? —ব্রাহ্মণ । লোকটা তাড়াতাড়ি উঠে দুহাত জুড়ে প্রণাম করে বললে—তবে হবে না বাৰু! আমরা জেলে—