পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN30 বিভূতি-রচনাবলী নেপাল নক্স একবার ঝালকাঠি বন্দরে নেীকো লাগিয়েছিল, তখন সে অপরের নৌকোতে মঝিগিরি করতো—সে সময় বন্দরে আগুন লাগে। একজন লোক একটা কাঠের হাতবাক্স নিয়ে জলন্ত ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওকে বলে— মাঝি, বাক্সট ধরে রাখে তো—আমি আসচি— এরপরে লোকটা আর নাকি ঠিক করতে পারেনি কার হাতে বাক্সট দিয়েছিল, নেপালও স্বীকার করেনি। সেই হাভবাক্সটি সে আত্মসাৎ করে। অনেক টাকা পেয়েছিল বাক্সের ভেতর, সেই টাকায় ব্যবসা করে নেপাল অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেছিল । এ গল্প অবিপ্তি নেপাল মাঝির মুখে শুনিনি, নেপালের শত্ররা বলতে এ কথা। তিনখানা বড় মহাজনী নৌকোতে সুপুর আর বালাম চাল বোঝাই দিয়ে সে ঝালকাঠি থেকে, আমাদের দেশে যেতে প্রতি বছর। আমি ঝালকাঠি বাজারের একটা বড় আড়তে নেপালের নাম করতেই আড়তের মালিক তাকে চিনতে পারলে। বললে—সে অনেকদিন আসে না, বেঁচে আছে কি জানেন ? এতদুরে এসে যদি দেশের লোকের কথা শোনা যায় অপরের মুখে, আমার বাল্যকালের নেপাল মাঝির সন্ধান রাখে এমন লোকের সঙ্গে দেখা হয়, তবে সত্যিই বড় আনন্দ পাওয়া ER | তিনদিন পরে স্টীমারে বরিশাল থেকে চাটগ রওনা হই। ছোট স্টীমার, লোকজনের ভিড়ও বেশি নেই—ডেকচেয়ার পেতে সামনের ডেকে বসে দূরের তীররেখা ও ঘোলা জল দেখে সারাদিন কোথা দিয়ে কেটে যায়। ভোলা বলে বরিশালের একটা বন্দরে স্টীমার লাগলে পরের দিন সকালে । এই ভোলার নামও করতে আমাদের গ্রামের নেপাল মাঝি । কি দুঃসাহসিক লোকই ছিলো, ধনপতি সদাগর কি ভাস্কো ডা গামা জাতীয় লোক ছিল আমাদের নেপাল, ছেলেবেলায় কি তাকে ভালো করে চিনতাম ? কোথায় আমাদের সেই ছোট্ট নদী, নদীতীরে বাশবনে ছায়, কুঁচলতার ঝোপটি—আর কোথায় সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের বন্দর ভোলা। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার সময় সন্দ্বীপের উপকূলে স্টীমার গিয়ে নোঙর করলে আর স্টীমার থেকে সব লোক নেমে চলে গেল—এমন কি খালাসীগুলো পর্যন্ত নেমে গেল। সন্দীপের উপকূলে এই সন্ধ্যাটি আমার চিরদিন মনে থাকবে। আমার একদিকে বঙ্গোপসাগর, তার কুলকিনীরা নেই—আসলে যদিও এটা সন্দীপের খাড়ি, ঠিক বহি:সমুদ্র নয়, কিন্তু দৃষ্টি যখন কোথাও বাধে না, তখন আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে সমুদ্রের যে রূপ ফুটে উঠেচে তার সঙ্গে কি বঙ্গোপসাগর, কি ভারত মহাসমুদ্ৰ—কারো কোনো তফাতই নেই। অদূরের তীরভূমি অপূর্ব মুদ, তাল আর নারকেল মুপারির বনে ঘন সবুজ। সন্ধ্যায় যখন সবাই নেমে গেল, আমি স্টীমারে একেবারে একা চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলুম শেষ