পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক ৩৬১ বৈকালের ক্রমবিলীয়মান রৌদ্র পীত থেকে স্বর্ণাভ, ক্রমে রাঙা হয়ে কি ভাবে তালীবনরেখার শীর্ষদেশে উঠে গেল, আকাশ কি ভাবে পাটকিলে, তারপর ধূসর, ক্রমে অন্ধকার হয়ে এল । অনেক দিন আগের সেই সন্ধ্যায় যে সব কথা আমার মনে এসেছিল—ডা আমার আজও মন থেকে মুছে যায়নি, সন্দীপের সমুদ্র-উপকূলের বহুবর্ষ আগেকার সেই সন্ধাটির ছবি মনে এলে, কথাগুলোও কেমন করে মনে পড়ে যায় । পরদিন খুব ভোরে স্টীমার ছাড়লো। চট্টগ্রামের যাত্রীদল শেষরূত্রে ডিঙি করে এসে স্টীমারে উঠলো—তাদের হৈ-চৈ আর গোলমালে ঘুম ভেঙে গেল। ডেকে ভিড় জমে গেল খুব, তার ওপর বস্ত বস্তা শুটকি মাছ এসে জুটলো, বাতাস ভারাক্রাস্ত হয়ে উঠলো মাছের দুর্গন্ধে । সকালে যখন হুর্যোদয় হল, তার আগে থেকেই দক্ষিণদিকে কূলরেখাবিহীন জলরাশি, বামে নোয়াখালি আর চট্টগ্রামের ক্ষীণ তীররেখা আর কিছুদূর গিয়েই নীল শৈলমালা। সঙ্গীপ চ্যানেল ছেড়ে স্টীমার অল্প কয়েক ঘণ্টার জন্তে বীর সমূদ্রে পড়ল—তার পরেই কর্ণফুলির মোহনায় ঢুকে ডবল মুরিং এ নোঙর ফেললে। চট্টগ্রাম সুন্দর শহর, তবে অত্যন্ত অপরিষ্কার পল্পীও আছে শহরের মধ্যেই। একটি জিনিস লক্ষ্য করেচি, কলকাতার বাইরে সব শহরের এক মূর্তি। সেই সংকীর্ণ ধুলোয় ভর্তি রান্ত, গলিখুঁজি, খোলা ড্রেন, টিনের ঘরবাড়ি । কেন জানিনে, এ সব ছোট শহরে দিনকয়েক থাকলেই প্রাণ ইপিয়ে ওঠে—দীর্ঘকাল এখানে যাপন করা এক রকম অসম্ভব। তবুও চাটগা বেশ মুদৃগু শহর একথা স্বীকার করতেই হবে। শহরের মধ্যে অনেকগুলি ছোট বড় পাহাড় ; এর যে কোনো পাহাড়, বিশেষ করে কাছারির পাহাড়ের ওপর উঠলে একদিকে সমুদ্র ও অন্তদিকে বহুদূরে আরাকানের পর্বতমালার নীল সীমারেখা চোখে পড়ে । এখানে একটি পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ আলাপ হয়ে পড়েছিল। আমি স্টীমার থেকে নেমেই এদের বাড়িতে গিয়ে উঠি । বাড়ির কর্তার নামে আমাদের সমিতির একখানা চিঠি ছিল। কখনো এদের চিনিনে, চাটগায়ে এই আমার প্রথম আগমন। বেশ বড় বাড়ি, ঢুকে বাইরের ঘরে দুজন চাকরের সঙ্গে দেখা—জিজ্ঞেস করে জানলুম বাড়ির কর্তা কাছারিতে বেরিয়েচেন, আসতে প্রায় চারটে বাজবে। মুতরাং বসেই আছি, কাউকেই জানিনে এখানে, কর্তার সঙ্গে দেখা করবার পরে যাবো, না হয় একটু বলি। 姆 বাড়ির মধ্যে থেকে এসে চাকরে জিজ্ঞেস করলে—ম জিজ্ঞেস করচেন, আপনি কি স্নান করবেন ?